যেভাবে বুঝবেন রক্ত দূষিত হয়ে পড়ছে

রক্তপ্রবাহ শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবাহ যত সুষ্ঠুভাবে হবে ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও তত ভালো থাকবে। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, ব্যক্তির রক্তের স্বাস্থ্য যেমন, ব্যক্তির স্বাস্থ্যও হবে তেমনি। রক্তে দূষণে সামান্য অসুস্থতা থেকে শুরু করে হৃদরোগ, এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। রক্তে যখন বিষধর্মী বা দূষিত পদার্থ থাকে, তখন রক্তের সেই অবস্থাকে বলে Toxemia। আর toxemia-র সঙ্গে যখন আবার অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং লিপিড থাকে, তখন তাকে বলা হয় Lipo-toxemia।

আর এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন কিছু সাবধানতা। রক্ত দূষিত হওয়া শুরু করলে শরীরে কিছু বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায়। তাই রক্তদূষণের শারীরিক লক্ষণগুলো ও প্রধান কারণগুলো জেনে নিন-

রক্তদূষণের লক্ষণ

– পেটে অতিরিক্ত চর্বি
যদি হঠাৎ করে আগের চেয়ে পেটে বেশি চর্বি জমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে রক্তে দূষিত পদার্থ রয়েছে। দূষিত রক্ত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ এবং কলেস্টেরল হজমের প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।

– ত্বকের সমস্যা
শরীরের দূষিত রক্তের মাত্রা বেশি হলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এতে ত্বকের পরিবর্তন, জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি হয়ে থাকে। তাই ত্বকে কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করুন।

– মাথা ব্যথা
বিষাক্ত পদার্থের কারণে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে খারাপ প্রভাব পরে। যা স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভঅবিক ক্রিয়া বাধা দেয় এবং পচণ্ড মাথা ব্যথা হয়।

– হাইপারথার্মিয়া
শরীরে দূষিত পদার্থ বেশি হলে তা লিভারকে অনেক বেশি জটিল কাজ করতে হয়। যার ফলে শরীরে অনেক তাপ উৎপাদন হয় যা শরীরকে অতিরিক্ত গরম করে তুলে।

– ক্লান্তি এবং শক্তিহীন
ভিরতে বিষাক্ত পর্দাথ থাকলে আপনি কিছুতেই শক্তিশালী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবেন না।

– সাইনাস এর কনজেশন
দূষিত ও বিষাক্ত পর্দাথ আপনার সাইনাসের সমস্যা তৈরি করবে। এছাড়া এতে সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারবেন না।

– অনিদ্রা
শরীরের মধ্যে বিষাক্ত রক্ত থাকায় নানা ধরনের সমস্যা হয়। তাই ঘুমের সমস্যা হয়।

– গলব্লাডার সমস্যা
বিষাক্ত বস্তু লিভারে যাওয়ায় পিত্ত টিস্যু ভারী হয়ে যায়। যার ফলে গলব্লাডারে সমস্যা দেখা দেয়।

রক্তদূষণের কারণ

অস্বাস্থ্য আহার
এ ধরনের খাদ্য গ্রহণের ফলে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ফ্যাট এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে গিয়ে ধীরে ধীরে ধমনীর গায়ে জমা হয়। আবার রক্তস্রোতে উপস্থিত অতিরিক্ত ফ্যাটে রক্ত কণিকা ও প্লেটলেটগুলো জমাট বেঁধে যায়। এর ফলে রক্তের ঘনত্ব বা blood viscosity বেড়ে যায়, কমে যায় অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা, সর্বোপরি রক্তপ্রবাহ মন্থর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যেসব ধমনী দূষিত পদার্থ জমে সংকুচিত হয়ে গেছে, সেখানে রক্তের স্বাভাবিক গতি বাধা পায় মারাত্মকভাবে।

মদ্যপান
মদ্যপানের ফলেও রক্তকণিকাগুলো জমাট বেঁধে যায়, রক্তে ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে যায়, নষ্ট হয় বহু প্রয়োজনীয় nutrients। সেই সাথে কয়েকটি এনজাইম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার ফলে ব্যাহত হয় অক্সিজেন সরবরাহ।

ধূমপান
ধূমপানের ফলে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস রক্তে মিশে রক্তের অক্সিজেন অপসারিত করে। তাছাড়া ধূমপানে নষ্ট হয় ভিটামিন সি, রক্ত চলাচলে যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এছাড়া আছে নিকোটিন যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে, ধমনীগুলোকে সংকুচিত করে।

থাইরয়েডের ত্রুটি
থাইরয়েড গ্ল্যাণ্ডের কর্মক্ষমতা নিম্নমানের হলে স্নেহ পদার্থের বিপাক ঠিকমতো হয় না। ফলে রক্তে কোলেস্টেরল ও ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। থাইরয়েডের কর্মক্ষমতা নিম্নমানের হয় খাদ্যগত আয়োডিন অথবা ভিটামিন বি১-এর অভাবে। অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করলেও ভিটামিন বি১-এর অভাব ঘটতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই