যেভাবে সম্পন্ন হলো বৃক্ষমানবের অপারেশন

‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’রোগে আক্রান্ত বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের প্রথম পর্যায়ের অপারেশন সাড়ে তিন ঘন্টার চেষ্টায় সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালামের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল আবুল বাজনদারের ডান হাতে পাঁচটি আঙুলেই অস্ত্রোপচার করে। সকাল সোয়া নয়টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় আবুলের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রথমবারের মতো ছুরি-কাঁচির নিচে নেওয়া‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’রোগে আক্রান্ত আবুলের অপারেশন ছিলো দেশীয় ডাক্তারদের জন্য ছিলো অনেক বড় চ্যালেঞ্জের। এ প্রসঙ্গে মেডিকেল বোর্ড’র সমন্বয়ক অধ্যাপক ডাক্তার সামন্ত লাল সেন বলেন, এটা ছিলো আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বহুল আলোচিত এ রোগ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় অনেক আলোচনা হয়েছে। ওপর ওয়ালা এবং দেশবাসীর দোয়ায় আমরা সফল ভাবে আজকের অপারেশন শেষ করতে পেরেছি।

তারপর বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আবুল বাজানদারকে নিয়ে। সে খুলনার পাইকগাছার ছেলে হয়ে কখনও খুলনা শহরে যায়নি। আর ঢাকাতে আসার পর এতো টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা দেখে এমনিতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। তার ভয় দূর করে অপারেশনের টেবিলের নিয়ে যাওয়াটাও ছিলো অনেক বড় চ্যালেঞ্জের।

‘ইলেক্ট্রো ডিসেকশন’ পদ্ধতিতে আবুলের অপারেশন করা হয়ে। প্রথমেই, ডায়ো-থার্মি ব্যবহার করে হাতে বাড়তি অংশ কেটে ফেলা হয়। কেননা এ পদ্ধতিতে রক্তপাতের সম্ভাবনা কম থাকে।

এ প্রসঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক প্রফেসর কবির বলেন, আমরা অপারেশনের জন্য ডায়ো-থার্মি ব্যবহার করেছি। কারণ রক্তপাতটা অনেক বড় ব্যাপার ছিলো। রক্তপাত কন্ট্রোল করার জন্য ইলেক্ট্রো ভেসেল ব্যবহার করা হয়েছে। এটা শেষ করার পর ‘ক্রাইয়ো সার্জারি’ করা হয়েছে। ক্রাইয়ো সার্জারি কারণে ব্যাকটেরিয়া সহজে আক্রমণ করতে না পারে।

দুই আঙুলের অপারেশন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পুরো ডান হাতের অপারেশন করার কারণ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালাম বলেন, প্লাস্টিক সার্জারিই শুধু নয় যেনো সার্জারির ক্ষেত্রেই অপারেশন থিয়েটারে আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। রোগীর কিসে লাভ হবে সেটাকেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দু’টো আঙুলের সার্জারি করবো।

প্রথমে তাকে আমরা অপারেশনের জন্য পুরোপুরি ফিট করেছি। তার সমস্ত অর্গান গুলো অ্যাপ্রোপিয়েট পর্যায়ে নিয়ে তবেই আমরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে আমাদের বুড়ো আঙুল ও তর্জনীতে অপারেশনের কথা ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওয়েট বহন করার কারণে ফিঙ্গার জয়েন্ট গুলো অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে বলে আমরা ধারণা করছিলাম।

সেই জায়গা থেকে আমরা পাঁচটা আঙুলকেই ওয়েট ফ্রি করার সিদ্ধান্ত নেই। টিমের সকলেই একমত হয়েছে আগে তার হাতের ভার কমিয়ে আনার ব্যাপারে। যখনই তার হাতের বাড়তি ওয়েট ফেলে দেওয়া হলো তখন তার হাতের কিছুটা মুভমেন্ট আমরা আইডেন্টিফাই করতে পারি।

পুরোপুরি রোগমুক্তির জন্য তার ‘ডিএনএ ম্যাপিং করে ‘বনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট’র প্রয়োজন হবে। এর আগে ৩-৪ সপ্তাহ পরে হবে পরবর্তী অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছে ডাক্তাররা।

গত ৩০ জানুয়ারি খুলনার পাইকগাছা থেকে আবুল বাজানদারকে ঢাকার বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তখন থেকেই বিশ্বের চতুর্থ ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে দেশে-বিদেশে আলোচনায় আসেন বাজানদার।



মন্তব্য চালু নেই