যেভাবে সেমিতে যেতে পারে বাংলাদেশ

দাপটের সঙ্গে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব উতরে মূলপর্বের টিকিট কেটেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সুপার টেনের লড়াইয়ে গ্রুপের প্রথম দল হিসেবে সেরা চারের আগেই ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা জাগিয়েছে টাইগাররা। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে শেষ চারের আশা একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি লাল-সবুজদের। যদিও আশাটা ধরে রাখার জন্য বাকি দুই ম্যাচে জয়ের পাশাপাশি গ্রুপের অন্য প্রতিপক্ষদের জয়-পরাজয়ের দিকেও নজর রাখতে হবে মাশরাফিদের।

মূলপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ রানে হেরে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ উইকেটে হেরেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। টাইগারদের হাতে এখন দুটি ম্যাচ বাকি। সেমিফাইনালের জন্য ক্ষীণ যে সম্ভাবনাটি টিকে আছে তাতে বাকি দুই ম্যাচেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে সাকিব-তামিমদের। যার প্রথমটিতে বুধবার ভারতের বিপক্ষে নামবেন মাশরাফিরা। পরের ম্যাচটি ২৬ মার্চ, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশকে কেবল এই দুটি ম্যাচে জিতলেই চলবে না, সেমির সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে জিততে হবে বেশ বড় ব্যবধানেও।

তবে বড় ব্যবধানে জিতলেই যে বাংলাদেশ সেমির টিকিট পাবে তেমনটিও নয়। এজন্য গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে টাইগারদের। যেমন, লাল-সবুজদের শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ কিউইদের মঙ্গলবার নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে। তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ ম্যাচে হারলেও তিন জয় নিয়ে অনায়াসেই সেমির টিকিট পাবে কেন উইলিয়ামসনের দল। প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিতে নিজেদের পথটা সুগম করে রেখেছে নিউজিল্যান্ড।

অন্যদিকে পাকিস্তানকে কেবল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেই চলবে না। নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে তাদের। এতে প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারা ও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পাওয়া শহিদ আফ্রিদির দলের জয় হবে টাইগারদের সমান- দুটি করে।

তখন বাকি হিসেব গড়াবে গ্রুপের অন্য দুই সঙ্গী অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ওপর। অস্ট্রেলিয়া যদি পাকিস্তানের কাছে হারে, তাতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়টিও তখন পর্যন্ত একমাত্র সঙ্গী হবে ওয়ার্নার-ওয়াটসনদের। এপর্যায়ে ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নামতে হবে অজিদের। সেখানে জিতলেও বাংলাদেশের সমান দুটি জয়ই হবে স্টিভেন স্মিথের দলের।

তখন ভারতের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া নিশ্চিত। আর যদি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বৈরথে ভারত জিতে যায়, তাতে অজিদেরই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হবে। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হেরে ঘরের মাঠে টুর্নামেন্টে যাত্রা করা ভারতের এখন পর্যন্ত জয় কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে। বুধবার ভারতের বিপক্ষে জিতে বাংলাদেশ যদি নিজেদের কাজটা সেরে রাখে, আর ওপরের বাকি দলগুলোর সমীকরণ মিলে যায়, তাতে অঘোষিত কোয়ার্টারে পরিণত হবে অজি-ভারত ম্যাচটি। যেটিতে ভারত যদি জেতেও, বাংলাদেশের সমান দুই জয়ের বেশি হচ্ছে না তাদের। অস্ট্রেলিয়া জিতলেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

সেক্ষেত্রে কেবল নিউজিল্যান্ডই একমাত্র দল হিসেবে তিনটি জয় নিয়ে কোন বাধা ছাড়াই সেমিতে উঠে যাবে। আর ওপরের সমীকরণগুলো মিলে গেলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার নামের পাশে লেখা থাকবে সমান দুটি করে জয়। যেটি গ্রুপের তিন দলকে সেমির পথে ওঠার লড়াইয়ে ঠেলে দেবে।

তেমন ঘটলে বাংলাদেশসহ গ্রুপের বাকি দলগুলোর সেমির টিকিট পেতে রানরেটের দ্বারস্থ হতে হবে। যাতে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। মূলপর্বে টানা দুই হারের পর -১.৭৪৯ রানরেট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের মতো এখানেও পিছিয়ে টাইগাররা। সমান ম্যাচে টেবিলের আপাতত শীর্ষ দল নিউজিল্যান্ডের রানরেট +১.৩৭৫। সেখানে পাকিস্তান (+০.৯৯৯), অস্ট্রেলিয়া (+০.১০৮) ও ভারত (-০.৮৯৫) রানরেট জমা করতে পেরেছে।

কাগজে-কলমে সেমির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে মাশরাফিদের তাই কেবল জিতলেই চলছে না, জিততে হবে বড় ব্যবধান ধরে রেখেই। এরপরও তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর দিকে।

অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে যখন কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, তখন টাইগারদের সাফল্যের মুকুটে আরো কিছু পালক যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন বোনা এখনই থামিয়ে দেয়ার সময় আসেনি। তবে ভঙ্গুর মনোবলের টাইগার শিবির একই স্বপ্ন দেখছেন কিনা সেটিও ভাবনায় রাখতে হবে বৈকি!



মন্তব্য চালু নেই