যেভাবে হাসপাতাল থেকে পালালো আসামি

হাসপাতালের টয়লেটে গিয়ে দেখেন ভেন্টিলেটর ভাঙা। ওপাশে একটি ইস্পাতের মই কংক্রিটের দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত। ব্যস, এই মওকা মিস করা যাবে না। পুলিশ ও মানুষের চোখ এড়াতে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা। তারপর সুযোগ বুঝে মই বেয়ে নেমেই চম্পট!

এভাবেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালানোর বর্ণনা দিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি সামাদ রাব্বানী (২৬)। সোমবার ভোরে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাকে সিলেট কোতোয়ালী থানায় আনা হয়।

সোমবার বিকেলে কোতোয়ালী থানায় গিয়ে দেখা গেছে, পালানোর পর ধরা পড়া ওই আসামিকে থানায় বন্দিশালায় রাখা হয়েছে। তার পরনে একটি গেঞ্জি ও তোয়ালে জড়ানো। এসময় আসামি রাব্বানীর সঙ্গে কথা হয় বাংলামেইলের এ প্রতিবেদকের।

কথোপকথনের শুরুতেই রাব্বানী জানান, তাকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে সিলেট ওসমানী হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। এসময় শৌচাগারে গিয়ে দেখেন ভেন্টিলেটর ভাঙা। অপর পাশে একটি মইও আছে। মইটি দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত। তখনই তিনি পালানোর কথা চিন্তা করেন। পরে যখন দেখেন ৪র্থ তলা থেকে নামার জন্যও একটি মই রয়েছে, তখন সিদ্ধান্ত নেন এ সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি পালানোর একদিন আগে চিন্তা শুরু করি- কখন, কীভাবে পালালে পুলিশ এবং জনতাকে ফাঁকি দেয়া যাবে। এক পর্যায়ে আমি গভীর রাতকেই বেছে নিই। তাই শনিবার রাত ২টার দিকে কারারক্ষীদের শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলি। তখন তারা আমাকে শৌচাগারে নিয়ে যান।’

শৌচাগারে প্রবেশ করেই ভেন্টিলেটর দিয়ে ৪র্থ তলা থেকে নিচের দিকে নামতে থাকেন। রাব্বানী বলেন, ‘৪র্থ তলা থেকে নামার পরপরই আমার যে হাতে হাতকড়া ছিল সেই হাত শার্টের ভেতরে ডুকিয়ে দেই। এরপর কৌশলে ওসমানী হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করি।’

তারপর হেঁটে হেঁটে বন্দরবাজার হয়ে কিনব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমার কদমতলী বাসস্ট্যাডে পৌঁছান রাব্বানী। গভীর রাত হওয়াতে কোনো বাস পাননি। তখন একটি দোকানের সামনে শুয়ে থাকেন। সকালে চা ও পাউরুটি খেয়ে হবিগঞ্জের বাসে ওঠেন। বাস কন্টেকটারকে ম্যানেজ করে ৬০ টাকা দিয়েই হবিগঞ্জে পৌঁছান।

টাকা কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই আমার কাছে কিছু টাকা ছিল। ওই টাকার দিয়ে চা ও একটি রুটি খেয়েছি। আর বাকি ৬০ টাকা দিয়ে হবিগঞ্জ গেছি।’

হবিগঞ্জ কেন গেলেন জানতে চাইলে রাব্বানী বলেন, ‘হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকায় আমার বউয়ের বড় বোনের বাড়ি। তাই আমি সেখানে গিয়েছি।’

সিলেট কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘মাধবপুর পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি কোম্পানীগঞ্জের সামাদ রাব্বানীকে গত মঙ্গলবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৪নং ওয়ার্ডে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত শনিবার রাত ২টায় হাসপাতালের শৌচাগারের ভেন্টিলেটর ভেঙে সামাদ রাব্বানী (২৬) নামের ওই আসামি পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় দায়িত্বরত তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সগীর মিয়া।

তিনি জানান, কয়েদি পালানোর ঘটনায় দায়িত্বরত দুই পুলিশ কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ওসমানী হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাদী হয়ে একটি বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও পাশাপাশি কয়েদি পালানোর ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে বলে জানান সগীর।



মন্তব্য চালু নেই