‘যেসব কারণে আপনার নামাজ-রোজা কবুল হচ্ছে না’

আমরা রোজা রাখা ও নামাজ পড়ার পরও যদি মিথ্যা কথা বলার বা নানা পাপের অভ্যাস ছাড়তে না পারি, তাহলে বুঝতে হবে যে আমাদের নামাজ-রোজা কবুল হচ্ছে না। আর নামাজ-রোজা কবুল হচ্ছে না বলে আমাদের অন্য কোনো দিকেও অগ্রগতি হচ্ছে না। অর্থাৎ আমাদের নামাজ ও রোজা-এসবই এক ধরনের প্রাণহীন অভ্যাস বা অভিনয়ের মত হয়ে পড়ছে। কারণ, নামাজ রোজায় আমরা যে শপথ নিচ্ছি বা যা বলছি তার সঙ্গে আমাদের অন্যান্য আচরণের কোনো মিল নেই। আর এই মিল না থাকার অর্থ হল মুখে আল্লাহকে যতই প্রভু বলি না কেন কাজের বেলায় আল্লাহকে না মেনে নিজের খেয়ালী-প্রবৃত্তিকেই প্রভুতে পরিণত করে নিয়েছি।

তওবা করলে মহান দয়াময় আল্লাহ তার অধিকার সংক্রান্ত যে কোনো পাপ ক্ষমা করবেন, এমনকি তা যদি শির্কের মত কঠিন গোনাহও হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ যদি কোনো বান্দাহ’র অধিকার লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির অধিকার ফিরিয়ে দেয়া বা তার সন্তুষ্টি অর্জন না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ নিজেও এমন ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না।

আত্মীয়-স্বজনের অধিকার রক্ষাও ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের সুরা নিসায় আল্লাহ বলছেন: ‘আর ইবাদত কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, এতীম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিত-জনকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। তাই আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়ার ওপর জোর দেয়া হয় রমজানের সংস্কৃতিতে। আমাদের দেশে অনেকেই বোনের বা নারী আত্মীয়ের অধিকার রক্ষা করেন না। এ ধরনের মহাপাপের পরিণতি দুনিয়াতেই স্পষ্ট হয়।

একবার যুব বয়সী এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অলৌকিক আধ্যাত্মিক শক্তি ও পবিত্রতার জন্য খ্যাত তেহরানের অধিবাসী শেইখ রজব আলী খাইয়াতের (দর্জি) কাছে এসে জানান যে, তার তৈরি করা বাড়িগুলো বিক্রিও হচ্ছে না ও ভাড়াও হচ্ছে না, অথচ ঋণের চাপে সে দিশেহারা হয়ে আছে! ওই আধ্যাত্মিক সাধক কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, তোমার বোনের কাছে যাও ও তাকে সন্তুষ্ট কর। ইঞ্জিনিয়ার বলল: আমার বোন আমার ওপর সন্তুষ্ট রয়েছেন। শেইখ বললেন, না। এবার ইঞ্জিনিয়ার কিছুটা ভেবে বলল, বাবা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু সম্পত্তি পেয়েছিলাম, সেখান থেকে বোনকে তো কিছুই দেইনি। এই ভেবে সে বোনকে ওইসব সম্পত্তির কিছু অংশ দিল। এরপর সে শেইখের কাছে ফিরে এসে বলল: এবার আমি আমার বোনকে সন্তুষ্ট করেছি। শেইখ কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, না এখনও সে সন্তুষ্ট হয়নি। তোমার বোনের কি কোনো বাড়ি আছে? ইঞ্জিনিয়ার বললেন, না। শেইখ বললেন, তোমার নির্মিত সবচেয়ে ভালো মানের অ্যাপার্টম্যান্টগুলো থেকে তাকে একটি দাও। ইঞ্জিনিয়ার তা-ই করল। এর পরপরই তার তিনটি অ্যাপার্টম্যান্ট বিক্রি হয়ে যায় এবং সে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়।

রমজান হচ্ছে খোদাভীতি অর্জনের, চর্চার ও জোরদারের মাস। মানুষ হিসেবে কতটা ভালো হয়েছি তা বিচার করার মাস এই রমজান। রমজানে শয়তান বন্দী থাকে বলে অন্য মাসের চেয়ে এই মাসে খোদাভীতি অর্জন সহজ। অন্য মাসে মানুষকে ভেতর ও বাইরের শয়তান-এ দুয়ের সঙ্গেই লড়াই করতে হয়। রমজানে আমাদের অমার্জিত ইচ্ছেগুলোকে বিবেক ও সুপ্রবৃত্তির আওতায় সংযত বা সুস্থ করা উচিত।

রমজান মাসে মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া বা সুধারণা রাখা এবং রুজি-রোজগারসহ সব বিষয়ে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতার সাফল্য সম্পর্কে দৃঢ়-বিশ্বাস পোষণের অনুশীলন বা চর্চা করা জরুরি। কুরআনে মহান আল্লাহর দয়ার ব্যাপারে নিরাশ হওয়াকে কাফিরদের বৈশিষ্ট্য বলে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। শয়তান মানুষকে নিরাশ করে তাকে আরও বেশি পাপে জড়াতে চায়।

এক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)’র কাছে এসে পরামর্শ চান। ইমাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা ও আশা বাড়াতে বললেন। তিনি তাকে বললেন, বাজারে কি তোমার দোকান-ঘর আছে? সে জানাল যে, হ্যাঁ, আছে, তবে কোনো পণ্য নেই। ইমাম বললেন, যাও দোকানটি খুলে পরিষ্কার করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে এই দোয়া পড়বে: হে আল্লাহ! আমি আমার সীমিত সক্ষমতাগুলোর ওপর ভরসা করছি না! আমি একমাত্র আপনার অসীম ক্ষমতার ওপরই আস্থাশীল। তাই আমার ক্ষমতা জোরদার করুন ও আমাকে রিজিক দান করুন। আবু তাইয়ারাহ নামের কুফাবাসী ওই ব্যক্তি ইমামের নির্দেশনা অনুযায়ী দোকান খুলে নামাজ ও দোয়া পড়লেন। এক ঘণ্টার মধ্যেই একজন ব্যবসায়ী এসে দোকানের অংশ বিশেষ ভাড়া নেন। এরপর প্রাপ্ত ভাড়ার টাকায় কিছু কাপড় কিনে আবু তাইয়ারাহ। ওই কাপড়গুলো সে এই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সহজেই বিক্রি করতে সক্ষম হন। এভাবে দিনে দিনে তার অবস্থা আবারও ভালো হয়ে যায়। আবারও সে নানা সম্পদ, কর্মচারী ও দাস-দাসীর অধিকারী হয়।

বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, আশা হচ্ছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার উম্মতের জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ। যদি আশা না থাকত তাহলে কোনো মা তার শিশুকে দুধ পান করাত না এবং কোনো কৃষক গাছের চারা লাগাতো না।

এবারে পড়া যাক অর্থসহ রমজানের ১৫ তম রোজার দোয়া:

اليوم الخامس عشر : اَللّـهُمَّ ارْزُقْني فيهِ طاعَةَ الْخاشِعينَ، وَاشْرَحْ فيهِ صَدْري بِاِنابَةِ الُْمخْبِتينَ، بِاَمانِكَ يا اَمانَ الْخائِفينَ .
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে তোমার বিনয়ী বান্দাদের মতো আনুগত্য করার তৌফিক দাও। তোমার আশ্রয় ও হেফাজতের উসিলায় আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে খোদাভীরু ও বিনয়ী বান্দাদের অন্তরে পরিণত কর। হে খোদাভীরু মুত্তাকীদের আশ্রয়দাতা।-রেডিওতেহরান



মন্তব্য চালু নেই