যে কারণে অলিম্পিকের আয়োজক হতে চায়না কোন দেশ

২০২৪ সালে অলিম্পিকের গর্বিত আয়োজক হতে যাচ্ছিল ইতিহাসের সোনালী শহর ইতালির রোম। কিন্তু মঙ্গলবার এটি ঘোষণা দেয় এই জমকালো এই আয়োজনের অংশীদার হবে না তারা। কারণ অলিম্পিকের ব্যয়বহুল খরচ।

শুধু রোম নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অলিম্পিক আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে পরে বাজেটের কথা চিন্তা করে সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি ও চীন। আয়োজক হিসেবে রোমের ঘোষণা দেয়ার আগে ২০২৪ সালের অলিম্পিক জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দেশটি এটি প্রত্যাখান করে। এছাড়া ২০২২ সালে পোল্যান্ডের স্টকহোম এবং কারাকোকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীতকালীন অলিম্পিক বেইজিংয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খরচের কথা ভেবে তারাও পিছিয়ে যায়।

কোন দেশ যখন অলিম্পিকের আয়োজন করে আয়োজনের পুরো খরচ ছাড়াও বৃহদায়তন বেশ কিছু প্রকল্পের কাজও হাতে নিতে হয়। নিরাপত্তার জন্য ব্যয় হয় বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার। অ্যাথলেট এবং পর্যটকদের জন্য হাজারো হোটেল রুম এবং বাড়ি নির্মাণ করতে হয়। করদাতা’রা সাহায্য করলেও খরচের তুলনায় তার পরিমাণ খুব কম। নির্বাচিত নেতাদের মধ্যে টিকিট বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। নির্মাণ কাজের জন্য নতুন চাকরি এবং বাড়তি পর্যটন মেরামতে যে খরচ হয় তা আয়কেও ছাড়িয়ে যায়। অর্থনীতিবিদরা বলেন, খরচের যে পরিমাণ ফেরত আসে তা আশাব্যঞ্জক নয়। সবকিছু পর্যালোচনা করেই রোম শহরের মেয়র ভার্জিনিয়া র‌্যাগি তার শহরে অলিম্পিক আয়োজনের বিরোধিতা করেছেন।

১৯৭৬ সালে গ্রীষ্মকালীন গেমসের আয়োজন করা হয়েছিল কানাডার মন্ট্রিলে। যে খরচের ব্যয়ভার দীর্ঘকাল ধরে বহন করতে হয়েছিল মন্ট্রিলকে। গেমসের আগে শহরের মেয়র ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘মানুষ একটি বাচ্চাকে বড় করতে যত খরচ করে অলিম্পিক তার চেয়ে বেশি নিশ্চয়ই লস করবে না।’ কিন্তু তার কথা ভুল প্রমাণিত হয়। অব্যবস্থাপনা এবং মাত্রাতিরিক্ত খরচের কারণে বাড়তি দেনা হয় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত মন্ট্রিলকে ঋণের বোঝা টানতে হয়। এমনকি অলিম্পিকের জন্য তৈরি করা বৃহত্তম স্টেডিয়ামটি বেসবল স্টেডিয়ামে রুপান্তরিত হয় এবং পরবর্তীতে এটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। মন্ট্রিলের নাগরিকরা এর নাম দেন ‘বিগ ওউই’ বা ‘বৃহত্তম ঋণ’।
১২০১৩ সালে অক্সফোর্ড বিজনেস স্কুলের গবেষকরা মন্ট্রিলের বিপুল পরিমাণ খরচ সম্পর্কে বলেন, ‘এই গেমসের খরচ ১০০ ভাগ অতিক্রম করেছে, অন্য কোন মেগা প্রজেক্টে এর মত বাড়তি ব্যয় হয় নি।’ তবে এই ঘটনার পর ১৯৮৪ সালে আয়োজক দেশ খুঁজে পাওয়া ছিল দু:সাধ্য। এবং পরে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির শর্তানুসারে লস অ্যাঞ্জেলসে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিশ্বের প্রথম আয়োজক হিসেবে ব্যক্তিগত খরচেই শহরটি অলিম্পিকের আয়োজন করে। ভেন্যু হিসেবে পুরনো স্টেডিয়ামকে নির্বাচন করায় বিপুল পরিমাণ খরচ থেকে বেঁচে যায় লস অ্যাঞ্জেলস। কিন্তু ফলাফল কি? লাভ।

কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ধরে নেয়া হয় অলিম্পিকের আয়োজনের জন্য নূন্যতম সরকারি বিনিয়োগ ছাড়িয়ে যাবে। রাশিয়া জানিয়েছে, ২০১৪ সালের সুচি অলিম্পিকে দেশটিকে গুনতে হয়েছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। যা অবিশ্বাস্য। চীন ২০০৮ সালে’র বেইজিং অলিম্পিকের খরচ আঁচ করতেই পারে নি।

ইতিহাস বলে অলিম্পিক আয়োজনের স্মৃতি খুব মধুর নয়। আয়োজক দেশ হিসেবে রোম তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এখন ভাবনা আগামী অলিম্পিক নিয়ে। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার বৈঠকে ২০২৪ সালের আয়োজক দেশ নির্ধারণ করা হবে। সূত্র: সিএনএন



মন্তব্য চালু নেই