যে কারণে জঙ্গিদের রক্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা

বর্বরতা ও নৃশংসতার কারণ খুঁজতেই গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের রক্ত পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এতে বোঝা যাবে হত্যাকাণ্ডের আগে তারা কোনও ধরনের মাদক গ্রহণ করেছিল কি না।

অপারেশন থান্ডার বোল্ট অভিযানের পর হলি আর্টিজানে ঢুকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা হতবাক হয়ে যান জঙ্গিদের নৃশংসতা ও বর্বরতার আলামত দেখে। তাদের অনেকেই বলেছেন, এমন নৃশংসতা ও বীভৎসতা তারা এর আগে দেখেননি।

হলি আর্টিজানে তিন বাংলাদেশিসহ ১৭ বিদেশি নাগরিকের অনেককেই জঙ্গিরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। অনেকের ঘাড়, মাথা, গলা ও মুখে কুপিয়ে বিকৃত করে দেয়। মাথার মগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরপরই প্রশ্ন ওঠে, এমন নৃশংসতা ও বর্বরতা কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে করতে পারে কি না।

বিষয়টি মাথায় রেখেই গুলশান হামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জঙ্গিদের রক্তসহ দেহের বিভিন্ন নমুনা প্রোফাইলিং এবং ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। গুলশান হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে দু’টি আবেদন করেন। আদালত তদন্ত কর্মকর্তার দু’টি আবেদনই মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনার আমিনুর রহমান।

আমিনুর রহমান আরও বলেন, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া নিহত পাঁচ জঙ্গির অস্থি-মজ্জা ও রক্ত মাখা জামা-কাপড়, রক্ত ও চুল জব্দ ও সংগ্রহ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে আদালতের কাছে। এর আগে গত ৬ জুলাই এ মামলার নথি (এফআইআর) আদালতে উপস্থাপন করা হলে আগামী ২৪ আগস্ট মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

হলি আর্টিজানের ঘটনায় নিহতদের ময়না তদন্তের তদারক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ময়না তদন্তের সময়েই তারা পাঁচ জঙ্গিসহ নিহত সবার রক্ত, শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা ও ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করে রেখেছেন। সব ময়না তদন্তের ক্ষেত্রেই তারা এটি করে থাকেন। কারণ পরে প্রয়োজন হলে তাদের শরীরের সেই আলামত সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না।

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য। যাতে পরে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।

হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের নৃশংসতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনও সুস্থ লোক এমন নৃশংসতা চালাতে পারে না। মৃতদের দেহে আঘাতের আলামত দেখে আমি হতবাক হয়েছি। তাছাড়া জঙ্গিদের রক্তসহ অন্যান্য আলামত ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষার পর জানা যাবে তারা মাদক গ্রহণ করেছিল কি না।

জঙ্গিদের নৃশংসতার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন, কেবল মাদক গ্রহণ করলেই যে এমন নৃশংসতা চালাবে এটা ঠিক নয়। তাহলে আমাদের দেশে অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যারা ইয়াবাসহ অনেক মাদক গ্রহণ করে। তারাতো এভাবে হত্যাকাণ্ড চালায় না। তিনি মনে করেন, বর্বরতা ও নৃশংসতার বিষয়টি জনমনে ভীতি ছড়ানোর জন্য জঙ্গিদের একটি কৌশলও হতে পারে, যা তাদের ট্রেনিংয়ের অংশ হয়ে থাকতে পারে। তবে এমন নৃশংসতার আগে কেউ মাদক গ্রহণও করে থাকতে পারে। কিন্তু মাদক গ্রহণই একমাত্র কারণ নয়।

গত ১ জুলাই শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া বোমা ও গুলিতে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। এছাড়া ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন যৌথবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয় জন। যাদের একজন হলি আর্টিজানের শেফ সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। তিনি জঙ্গিদের সহযোগী বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জাকির হোসেন শাওন। তাকেও জঙ্গিদের সহযোগী সন্দেহে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছিল।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলো- মীর সামেহ মোবাশ্বের (১৯), রোহান ইবনে ইমতিয়াজ (২০), নিবরাস ইসলাম (২০), খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২) ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল (২৬)। -বাংলা ট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই