যে ছিল ভীতু ও বিনয়ী, এখন সে বড় সন্ত্রাসী!

এলাকার মানুষের মতে, তিনি নিরীহ ও বিনয়ী। কথা বলতেন কম। পরিবারের মতে, তিনি ছিলেন রাতে ঘরের বার হতে ভয় পেতেন এমন মানুষ। এলাকার মানুষের সঙ্গে কম মেলামেশা করা সেই নিরীহ মানুষটি, এখন পুরস্কার ঘোষিত আসামি। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন পুলিশের হাতে। তার এই অবস্থান এলাকার মানুষের কাছে কিছুটা বিস্ময় জাগানিয়া ।খবর ঢাকাটাইমসের।

তবে জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে পুলিশের পুরস্কার ঘোষণার আগ পর্যন্ত এলাকার অনেকেই জানতেন না মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত কোথায় আছেন, কী করছেন। চার মাস ধরে পরিবারের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ ছিল না।

নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রচারপত্র বিলির সময় বছর ছয়েক আগে একবার শামীম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুনামগঞ্জের ছাতকে। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সিলেটে চলে যান পড়তে। সেই থেকে এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ কমে আসে তার। ফলে শামীমকে একরকম ভুলতে বসেছিল এলাকার মানুষ।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গী থেকে দীপন হত্যার আসামি হিসেবে শামীমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তার সম্পর্কে তথ্য দিতে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ডিএমপি। এর পরই আলোচনায় আসেন শামীম।

লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, ভিন্নমতাবলম্বীসহ অন্তত ১০ জনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত মে মাসে পুলিশ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সন্দেহভাজন ছয় জঙ্গির ছবি প্রকাশ ও পুরস্কার ঘোষণা করে। শামীম ছিলেন ওই ছয়জনের একজন।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে শামীমের বাড়ি । ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাবা আবদুল কুদ্দুছ মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে।

ছাতক থানার পুলিশ জানায়, ছাতক শহরে হিযবুত তাহরীরের প্রচারপত্র বিলির সময় ২০১০ সালের প্রথম দিকে শামীমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাতক থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। একপর্যায়ে শামীম সুনামগঞ্জের সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পান। পরে উচ্চ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে স্থায়ী জামিন দেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, জামিন পেয়ে শামীম ছাতক থেকে সিলেটে চলে যান লেখাপড়া করতে। সিলেটে থাকাকালে বছরে দু-একবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন এবং খুব কম সময় বাড়িতে অবস্থান করতেন। গত চার মাস পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিলেন শামীম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শামীমের বড় ভাই আবু জাফর টিপু ছাতক শহরে একসময় রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন সিলেট সরকারি কলেজে। শামীমসহ ছোট তিন ভাই সিলেট শহরের শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে লেখাপড়া করেন। তাদের মধ্যে দুই ভাই নাজমুল হাসান লিটু ও মঞ্জুরুল হাসান মনজু লন্ডনে আছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন ব্যক্তি জানান, শামীমকে গত কয়েক বছর এলাকায় কম দেখা গেছে। এলাকার লোকজন জানেন, শামীম সিলেটের মদনমোহন কলেজে লেখাপড়া করছেন। এক প্রতিবেশী বলেন, শামীম খুবই বিনয়ী ছেলে ছিলেন। কম কথা বলতেন। মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও করতেন কম। তাদের পরিবার এলাকায় বেশ পরিচিত। তার বাবা এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন।

শামীমের বড় ভাই আবু জাফর টিপু বলেন, ‘আমার ভাই খুবই নিরীহ প্রকৃতির ছেলে। যে ছেলে রাতে ভয়ে ঘর থেকে বের হতো না, এখন শুনি সে ঢাকায় গিয়ে বড় সন্ত্রাসী হয়েছে, মানুষ খুন করেছে। আমরা এর কিছুই জানি না। গত ঈদেও সে বাড়িতে আসেনি। তখন থেকে তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

অবশ্য পুলিশ আগে থেকেই শামীমের খোঁজ রাখছিল বলে জানান সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, “শামীমদের বাড়িতে পুলিশের নজরদারি ছিল। কিন্তু তিনি চার মাস ধরে পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।”



মন্তব্য চালু নেই