যে তিনটি কারণে ভারতের বিপক্ষে যায় না আইসিসি!

‘প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি’ – শিরোনামটা এমন করলেও ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি ভারতের প্রশ্নে বরাবরই মুখে কুলুপ এটে থাকবে। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে বাজে আম্পায়ারিংয়ের জন্য তো তারা রীতিমত ভারতের পক্ষে সাফাইই গাইলো।

ফলে, বারবারই একটা প্রশ্ন সামনে চলে আসছে, কেন কখনওই ভারতের বিপক্ষে যায় না আইসিসি?

ভারতীয় বাজার

ভারত মানে হল ১২০ কোটি ভোক্তার বাজার। এক জরিপে দেখা যায়, ২৫ বা তার চেয়ে কম বয়সী ভারতীয়দের মধ্যে প্রায় শতকরা আশি ভাগই ক্রিকেট বলতে অজ্ঞান। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখের সামান্য বেশি। আর, আইসিসির বার্ষিক আয়ের শতকরা আশি শতাংশ আছে ভারত থেকে। বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থানে থাকবে ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সেই জায়গায় আছে ভারত।

সেদিক থেকে বানিজ্যের দিক বিবেচনা করলে ভারত যদি বিশ্বকাপ জিতে যায় তাতেই বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে আইসিসি। আর, তাদের বিপক্ষে যায় এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার মানেই হচ্ছে ১২০ কোটি ভোক্তাকে হারানো।

বিগ-থ্রি ফ্যাক্টর

সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা চলতি বছরের শুরুতে বলেছিলেন, ‘আইসিসি বলতে এখন আর কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। যা আছে তা হল বিসিসিআিই। আর আইসিসি মানে এখন আর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল নয়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম কাউন্সিল।’

এটা বলার যথার্থ যৌক্তিকতাও আছে। কারণ, আইসিসি তথা ক্রিকেট পরিচালনার দায়ভার মূলত তিনটি দেশের উপর। ‘বিগ-থ্রি’ নামে পরিচিত সেই তিনটি দেশ হল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ক্রিকেট-অর্থনীতি থেকে শুরু করে ক্রিকেট-কাঠামো সবই তাদের নিয়ন্ত্রনে। বাকি দেশগুলো স্রেফ হুকুমের পুতুল। আর ভারতীয় বাজারের প্রভাব বেশি থাকায় আইসিসিতে ভারতীয় প্রভাবটা বরাবরই শক্ত।

ক্রিকেট-বিশ্বায়নের নিয়ন্ত্রনকারী

এক সময় ক্রিকেটের বিস্তার ঘটেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে; এরও আগে খেলাটা খেলতো মূলত ইংলিশ ও দক্ষিণ ওয়েলসের অভিজাতরা। এখন ক্রিকেট চলছে ভারতীয় অর্থায়নের রাজনৈতিক প্রভাবে। বিশ শতকে ক্রিকেটের বিশ্বায়নকে তাই বলা যায় ‘ভারতায়ন’। সে জন্যই কি না আশীষ নন্দী (২০০১) বলেছেন, ‘ক্রিকেট হল ভারতীয় একটা খেলা, দুর্ঘটনাবশত যেটা আবিষ্কার করে ইংরেজরা।’

ঔপনিবেশিক আমলেও ক্রিকেট-বিশ্বায়নের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন ব্যবসায়ী কিংবা অভিজাতরা। আর এরাই বিশ শতকের পরবর্তী সময়ে ক্রিকেটকে চুড়ান্ত বানিজ্যিকীকরণের দিকে নিয়ে যান। উদয় হং গণমাধ্যমের। বিশ শতকের শেষ ভাগে এসে দেখা যায়, গণমাধ্যম ও ক্রিকেট কাজ করছে একে অপরের হয়ে। সেই কাজটাও আবার নানা রকমের- পূঁজির যোগান দেয়া, দর্শক ধরে রাখা, বিপণনে সাহায্য করা ইত্যাদি। আর ভারতকে বাদ দিয়ে এসব করার সাধ্য স্বয়ং আইসিসিরও নেই!



মন্তব্য চালু নেই