যে দশটি অধিকার থেকে ফিলিস্তিনিদের বঞ্চিত করেছে ইসরাইল

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপর রাগ ঝাড়ছে ইসরাইল ও তার ঘনিষ্ট কয়েকজন মার্কিন রাজনীতিক।

আর তার অন্যতম কারণ ফিলিস্তিদের কাছ থেকে জবর-দখল করা জমিতে ইসরাইলের বসতি স্থাপন বন্ধে জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে ওবামা প্রশাসনের ভেটো না দেয়া।

যুগের পর যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলিদের বর্বরতা দেখেও না দেখার ভান করে আসছে পশ্চিমারা।

ফিলিস্তিনিদের আর কী কী থেকে বঞ্চিত করছে ইসরাইল তার উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাফিংটন পোষ্ট। প্রতিবেদনটির চুম্বক অংশ যুগান্তরের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।

স্বাধীনভাবে চলাচলে বাধা
ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশেই স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছে না। বিশেষ করে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে যখন-তখন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আগ্রাসন, যাকে খুশি তাকেই বাড়ি থেকে তুলে নেয়া এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।

গাজায় পণ্য পরিবহনে ইসরাইলের বিধি-নিষেধ
হামাস শাসিত গাজায় পণ্য পরিবহনে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে ইসরাইল। ২০০৭ সালে গাজায় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব হামাস পাওয়ার পর থেকে সেখানে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী এ বিধি-নিষেধ আরোপ করে।
এর ফলে সেখানে প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ওষুধ নিতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে অপুষ্টিতে ভুগছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

দখলকৃত অংশে পানির নিয়ন্ত্রণও ইসরাইলের হাতে
১৯৬৭ থেকে জবর-দখল করা ফিলিস্তিন অংশে পানির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল। বিশেষ করে গাজা ও পশ্চিম তীরে পানির জন্য ফিলিস্তিনদের যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তার উপর যখন-তখন পানির সরবরাহ বন্ধ করে তাদেরকে বিপদে ফেলছে ইসরাইল। এ তথ্য ইসরাইলের মানবাধিকার সংগঠন বিৎসেলেমের।

বেথেলহেমের বাসিন্দরা মানবাধিকার সংগঠনটির কাছে এমনও অভিযোগও করেছেন যে, টানা ৪০ দিন পানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছিল ইসরাইল। ওই সময় তাদের নাওয়া-খাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়েই তাদের অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কেটেছে।

চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত
ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিন হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক রোগীও চিকিৎসা করতে বাইরে যেতে চাইলে তাদের বাধা দিচ্ছে ইসরাইল।

মিডেলইষ্ট মনিটর নামে একটি সংগঠন জানায়, এ বছর ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৪৮ ফিলিস্তিন নারী ট্রেভেল পার্মিটের জন্য আবেদন করলেও নিরাপত্তার অজুহাতে চার শতাধিক নারীকেই চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেয়নি ইসরাইলি প্রশাসন।

অধিকৃত এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বহিস্কার
দখলকৃত এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে সেখানে ইহুদী বসতি গড়ে তুলছে ইসরাইল। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে নতুন করে ৬ লাখ ইহুদী বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অধিকৃত এলাকায় নতুন করে ২০ শতাংশ বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানকার হাজার হাজার ফিলিস্তিন ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইল।

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত ফিলিস্তিনিরা
ইজরাইলী আগ্রাসনে নিজেদের ভূমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। নিজ ভূমিতে তারা পরাধীন। যখন-তখন বিনা প্ররোচনায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে ইসরাইলি বাহিনী।

বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটাচ্ছে, গুলি করছে। এর ফলে তারা ন্যূনতম নাগরিক অধিকারও পাচ্ছেন না। নিজ দেশে এখন তারা উদ্বাস্তু।

আইনী সুবিধা থেকে বঞ্চিত
অন্য সব মৌলিক সুবিধার সঙ্গে আইনী সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া লোকজনদের আট দিন পর্যন্ত বিনা বিচারে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে ইসরাইলে। অথচ, ইসরাইলি আসামিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।

ফিলিস্তিন বন্দিদের ব্যাপক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।



মন্তব্য চালু নেই