যে দশটি জিনিস আপনি ফেসবুকে কখনই করবেন না

ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। আধুনিক মানুষ মাত্রই ফেসবুক ব্যবহারকারী। আর তরুনদের কথা তো বলারই প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারে কিছু কিছু জিনিস না করাই ভালো। আমরা যেমন কালো প্যান্টের সাথে লাল মোজা পড়ি না, কিংবা রাতের বেলা কালো সানগ্লাস – এগুলো যেমন ঠিক পরিশীলিত নয়, তেমনি ফেসবুকে আপনি কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনার করা ঠিক হবে না। এমন দশটি কাজ আমরা এখানে তুলে ধরছি যা আপনি কখনই ফেসবুকে করবেন না।

১. বিব্রতকর ছবিতে কখনই কোনও বন্ধুকে ট্যাগ করবেন না

বিব্রতকর অবস্থায় আমরা জীবনে কে না পড়ি? সবাইকেই কম বেশি পড়তে হয়। একটা সময় ছিল, যখন আপনা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও তেমন কোন মানুষ জানতে পারতো না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। কোনও একটা পার্টিতে গিয়েছেন। হয়তো আপনার একজন বন্ধু কখনই ড্রিংক করেন না; কিন্তু সেদিন কিভাবে যেন একটা গ্লাস হাতে তুলে নিলেন। আর যায় কোথায়! আপনি ছবি তুললন। তারপর আপলোড করে দিলেন ফেসবুকে। তারপর বন্ধুটিকে করলেন ট্যাগ। ব্যস। সেটা তখন দেখতে পেলো তার পরিবার, অফিসের বস এবং আরো অনেকেই। কোনও বন্ধুকে এভাবে বিব্রত করবেন না। এমন করতে থাকলে, ধীরে ধীরে আপনি একা হয়ে যাবেন। এবং এক পর্যায়ে আপনাকেও এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে।

২. মানুষকে মাত্রারিক্ত গেম/কুইজ/গ্রুপ রিকোয়েষ্ট পাঠাবেন না

ফেসবুকে অন্যদেরকে আপনার পছন্দের গেম কিংবা কুইজ অথবা কোনও গ্রুপে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ পাঠানো খুবই সাধারন একটি বিষয়। তবে, এটা মাত্রারিক্ত করবেন না। কাউকে বারবার এসব অনুরোধ পাঠানো, আর বাস্তবে তার মুখের উপর গিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এটা খুবই বিরক্তিকর একটি কাজ। নিজেকে সেই বিরক্তকর পরিস্থিতে ফেলা কি ঠিক হবে?

৩. আপনার প্রোফাইলের ছবিটি আপনার নতুন জন্মনেয়া শিশুর ছবি দিয়ে রিপ্লেস করবেন না

আমরা প্রায়শই নিজের সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর ছবি দিয়ে দেই নিজেদের প্রোফাইল ছবিতে। কিছু কিছু মা-বাবা আছেন যারা হয়তো গোটা পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষকে জানাতে চান, তারা একটি বাচ্চা জন্ম দিয়ে কতই না বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন।
মার্ক জুকারবার্গ এই ফেসবুক তৈরী করার আগে এই ধরনের মা-বাবাদের হাতে দুটো অপশন খোলা ছিল – ক). হাজারো মানুষের ইমেল ইনবক্স তারা ছবি পাঠিয়ে ভরে রাখতো; নয়তো খ). বিভিন্ন মানুষকে টেলিফোন করে বুঝানোর চেষ্টা করতো তাদের নবজাতকটি কেন আইনষ্টাইনের মতোই এই গ্রহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এখন তাদের জীবনে যোগ হয়েছে তৃতীয় মাধ্যম – ফেসবুক। আপনি আপনার প্রোফাইল পিকচারটিতে আপনার নবজাতকের ছবি বসিয়ে দিয়ে সবাইকে এটাই জানিয়ে দিলেন যে, আপনি একজন বয়স্ক মানুষ। স্কুল জীবন থেকে আপনার অনেকগুলো বছর পেড়িয়ে গেছে। মানুষ ভাবতে শুরু করে, আপনি বুড়িয়ে গেছেন। আর পাশাপাশি, যাদের বাচ্চা নেই আপনি তাদের ইমোশনকে আঘাত করছেন। তাই, এটা করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. প্রতিনিয়ত দুঃখের স্ট্যাটাস দিবেন না

কিছু কিছু মানুষ আছে, তাদের কাছে প্রতিটা দিনই যেন একটি খারাপ দিন – অন্তত তাদের স্ট্যাটাস পড়লে তাই মনে হবে। সেসকল স্ট্যাটাসের অনেকগুলোই হয়তো খুব মন খারাপ কিংবা হতাশা থেকে লেখা হয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার এই স্ট্যাটাস কেউ না কেউ আবার ব্রডকাস্ট করছে। এবং সেই হতাশা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিচ্ছে।

আপনি যদি এমন হতাশার মূলটা হোন, তাহলে সেটা করা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে নীচের সূত্রটি মনে রাখবেন – যদি আপনার প্রিয় কোনও মানুষ মারা যায়, কিংবা আপনার চাকুরীটি চলে যায়, তখন আপনি অবশ্যই বন্ধুদের কাছে সমবেদনা চাইবেন। কিন্তু আপনি আপনার একটি নখ ভেঙ্গ ফেললেন, কিংবা বাস মিস করলেন, কিংবা পায়ে হালকা ব্যাথা পেলেন – এই কষ্টগুলো নিজের ভেতর বহন করতে শিখুন। এই সব কষ্ট সবার সাথে শেয়ার করবেন না।

৫. অফিসের বসকে কিংবা সহকর্মী/বন্ধুদেরকে হেয় করে কোনও মন্তব্য বা স্ট্যাটাস দিবেন না

অফিসের বসকে হেয় করে কথা বলা সব সময়ই খুব ঝুকিপূর্ণ। ফেসবুকে আমরা অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ইমোশনাল হয়ে মন্তব্য বা স্ট্যাটাস লিখে ফেলি। কিন্তু সেই মন্তব্য বা স্ট্যাটাসের কারণে আপনাকে সেই অফিস থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বাসায় চলে আসা লাগতে পারে; এবং সেটা অন্যান্য সহকর্মীদের সামনে দিয়েই।

আপনার যখন একটি কাজে ব্যস্ত থাকার কথা, তখন আপনি সেই কাজটিকে সমালোচনা করে মন্তব্য বা স্ট্যাটাস দেয়াটা খুবই খারাপ একটি বিষয়। ধরুন, আপনার একটি রিপোর্ট তৈরী করার কথা যা আপনার মন মতো নয়; এবং আপনি স্ট্যাটাস দিলেন, “ধ্যুৎ, রিপোর্ট লেখা একটা শয়তানের কাজ!” – ব্যাস। আপনার বসের চোখে সেটা পড়বেই। আর তখুনি যদি সেটা চোখে না পড়ে, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, দু-তিন দিনের ভেতরই কেউ না কেউ তাকে সেটা জানিয়ে দিবেনই। তখন আপনার ওখানে কাজ করাটাই অসম্ভব হয়ে উঠবে।

৬. আপনার ছেলেমেয়ে, ভাগ্না/ভাগ্নি, ভাতিজা/ভাতিজী ইত্যাদি কাউকে ফ্রেন্ড অনুরোধ পাঠাবেন না

খুবই অবাক হচ্ছেন, তাই না? একটু ভেবে দেখুন – ফেসবুক কিভাবে শুরু হয়েছিল? ফেসবুক শুরু হয়েছিল হার্ভার্ডের ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ভেতর ছবি শেয়ার করার জন্য। তারপর সেটা ছড়িয়ে গেলো আমেরিকার অন্যান্য কলেজে, তারপর পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, স্কুলে এবং যাদের বয়স ১৩-এর উপরে তাদের সবার ভেতর। তার অনেক পরে এসে আপনার মামা, চাচা কিংবা মা এটা বুঝতে পেরেছে এবং যুক্ত হয়েছে।

যখন কিশোরদের কোনও বিষয় মা/বাবারা পছন্দ করতে শুরু করেন, সাধারনত ধরে নিতে হয় যে, ওই ট্রেন্ডটার ওখানেই মৃত্যু হলো। তবে ফেসবুক এখনো সেই অবস্থায় পৌছুয়নি। এখনও এটি বুড়ো এবং যুবা – সবাই পছন্দ করছে। এবং কিছু কিছু অতি সচেতন মা/বাবা তাদের সন্তানরা ফেসবুকে কী করছে সেটা দেখার জন্য তাদেরকে বন্ধু হিসেবে যোগ করেন। আর বিপদটা সেখানেই। আপনি নিজে কি চাইবেন আপনার বন্ধুদের সাথে যাবতীয় আলাপ আপনার মা/বাবা শুনে ফেলুক? কিংবা আপনি বন্ধুদের নিয়ে কোথাও একটু বৈচিত্র করতে গিয়েছেন, সেই ছবি আপনার মা/বাবা দেখুক? যদি সেটা না চান, তাহলে ধরে নিন, আপনার ছেলেমেয়েরা কিংবা ভাগ্নে/ভাগ্নিরাও সেটা চায় না।

৭. পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকার পিছু নেবেন না

সম্পর্ক গড়ে, সম্পর্ক ভাঙ্গে – এটাই মানুষের ধর্ম। কোনও সম্পর্কই সারাটা জীবন এক রকম থাকে না – সেটা কখনও আপনার দিক থেকে, কখনও অপর দিক থেকে। যে কোনও কারণেই হোক, আপনার হয়তো সম্পর্কটি আর টিকলো না – অনেক কষ্টে আপনি নিজেকে এমন একটা জায়গায় আনলেন যেন, আপনি আবার নতুন করে ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত।

আপনি নতুন সম্পর্কে জড়ালেন। তার সাথে নতুন স্মৃতি তৈরী হচ্ছে। পুরনো সব কিছু ফেসবুকের পাতা থেকে মুছে ফেলেছেন। এমনকি, পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকাকে “আনফ্রেন্ড”-ও করে ফেলেছেন। নতুন সম্পর্ক নিয়ে আপনি ডুবে আছেন।

কিন্তু হঠাৎ কী মনে হলো, আপনি দেখতে চাইলেন আপনার পুরনো মানুষটি কেমন আছে! আর তখুনি ঘটবে যত বিপত্তি। কখনও সিনেমা দেখতে গিয়ে, কিংবা শপিং মলে গিয়ে পুরনো মানুষের সাথে হুট করে দেখা হয়ে গেলে আপনি যেমন কিছুটা সময়ের জন্যও পুরনো সময়ে হারিয়ে যাবেন, ফেসবুকেও তাই। এবং সেটা আরো বেশি মাত্রায়, কারণ ফেসবুকে খুব সহজেই আপনি আপনার পুরনো মানুষকে খুঁজে পাবেন, সে কোথায় গেলো, কার সাথে মিশছে, কোথায় ডিনার করতে যাচ্ছে, কার সাথে লং ড্রাইভে যাচ্ছে – ইত্যাদি সব কিছুই আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে। ভুলেও ফেসবুকে পুরনো সম্পর্কের পিছু নেবেন না। আপনার জীবন পুড়ে ছাড়খার হবে।

৮. বুঝতে অসুবিধা হয় এমন স্ট্যাটাস লিখবেন না

আমরা প্রায়শই দেখি, মানুস স্ট্যাটাস লিখেছ হরেক রকমের সিম্বল দিয়ে, হাসির চিহ্ন, এক্স, এক্স ইত্যাদি – যা বুঝতে সেটা পড়তে হয় কয়েক বার। এমন দুর্বোধ্য স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে সবার সামনে ছোট না করে, পরিস্কার ভাষায় স্ট্যাটাস দিন।

৯. হুট করেই রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস “সিঙ্গেল” করার মাধ্যমে কাউকে ডাম্প করবেন না

সম্পর্ক ভাঙ্গতেই পারে। তবে একটি সাধারন সম্পর্ক ভেঙ্গে দুটো মানুষের ভেতর যে পরিমান কথা এবং ইমোশন যুক্ত থাকে, হুট করে ফেসবুকে “সিঙ্গেল” লিখে দিলেই সেটা শেষ হয়ে যায় না। এটা খুবই ছোটমানুষী। নিজেকে সবার সামনে ছোটমানুষ হিসেব তুলে ধরার প্রয়োজন নেই।
সম্পর্ক ভাঙ্গার ঘোষনা দেয়ার জায়গা ফেসবুক যেন না হয়। একটি সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কিছুটা সময় নিয়ে, ধীরে সুস্থ্যে আপনার স্ট্যাটাস আপডেট করুন। কিন্তু ফেসবুকে এসে সম্পর্ক ভাংবেন না।

১০. একদম অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানাবেন না

আপনি নিশ্চই একটি খাবারের দোকানে গিয়ে কাউকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করবেন না, আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি? আপনার কাউকে ভালো লাগলে হয়তো, তার সাথে সৌজন্য কা বলবেন, তাকে চেনার চেষ্টা করবেন, তারপর হয়তো কখনও সেটা বন্ধুত্বে রূপ নিতে পারে। কিন্তু এই কাজটি আমরা হরহামেশাই ফেসবুকে করে থাকি। একদম অজনা মানুষকে আমরা বন্ধু হিসেবে যোগ করে ফেলি।
ফেসবুকে এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন যারা অপরিচিত মানুষকে বন্ধু রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে থাকেন। এবং তারা মনে করেন, এটা ঠিক একটি কাজ। তাদের ধারনা ভুল। এটা মোটেও ঠিক কোন কাজ নয়। কোনও অপরিচিত কারো সাথে যদি বন্ধুত্ব করতে হয়, তাহলে তাকে রিকোয়েষ্ট পাঠানোর সাথে কারনটিও ব্যাখ্যা করুন।

আশা করছি আপনারা এগুলো মেনে চলবেন; এবং নিজেকে সুন্দরভাবে কোটি কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরবেন।

-ফেসবুক থেকে নেওয়া



মন্তব্য চালু নেই