যে নীল রং এর শহরটি বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে

ভারতের যোধপুর শহরটি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ‘ব্লু সিটি’ নামে। ১৪৫৯ সালের মাঝামাঝি রাঠোর সম্প্রদায়ের প্রধান রাও যোধা এই শহরটির গোড়াপত্তন করেন। নিজেদের আবাসস্থল গুহা থেকে সরিয়ে প্রথমবারের মতো তারা সমতল ভূমিতে আসেন এবং মূল ভূমি থেকে ৪০০ ফুট উচু করে শুরু হয় মেরানগাহ দুর্গের কাজ। এই দুর্গকে কেন্দ্র করেই পরবর্তী সময়ে ক্রমশ গড়ে উঠে এই ব্লু সিটি। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয় এই শহরে।

কোবাল্টে নির্মিত দেয়ালগুলো গ্রীস্মের চরম গরমেও ঘরকে শীতল রাখে। স্থানীয়দের মতে, বাড়িগুলোতে এই নীল রং ব্যবহারের কারণ হলো উচু জাতের পুরোহিতদের নির্দেশের ফল। ব্রাহ্মণদের বড়ি থেকে নিচু জাতের মানুষদের বাড়ি আলাদা করার জন্যই এই বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এই নিয়ম মেনে মরুভূমির এই শহরটির বাসিন্দারা যুগের পর যুগ ধরে তাদের বড়িগুলোর রং নীল করে যাচ্ছে। এখনও এই শহরের মানুষের যাপিত জীবন অনেকাংশেই নির্ভর করে ব্রাহ্মনদের দেয়া বিধানের উপর। ব্রাহ্মনদের বিধান ছাড়া এখনও কেই বিবাহের মতো সম্পর্কেও জড়াতে পারে না।

2015_10_03_15_16_26_Idl5wXwyA3b6Htfog0gVrvmJpuyqGD_original

একটা সময় ছিল যখন এই শহরকে স্থানীয় ভাষায় ‘মারোয়ার’ (বাংলায় মৃত্যুভূমি) নামে ডাকা হতো। মূলত আবহাওয়া এবং গোত্রে গোত্রে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণেই অবশ্য এই নামে ডাকা হলেও, ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতের জন্ম হলে এই গোত্রে গোত্রে সংঘর্ষের ঘটনা কমে আসে। কারণ তখন সকল আদিবাসী গোত্রকেই নতুন জোয়ারের পরিবর্তনের সঙ্গে ভিন্নধর্মী লড়াইয়ে নামতে হয়। গোটা শহরটি কৌশলগতভাবে তৈরি করা হয়েছে সেই শুরু থেকেই। যে কারণে এই শহরে বাইরে থেকে এসে আক্রমন চালিয়ে বের হয়ে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব।

2015_10_03_15_16_59_GWAYiH9xnuwfirx9r8LmHfbfq1MlqA_original

রাজস্থানের অধিকাংশ নারীই লম্বা এবং বিচিত্র রংয়ের পোশাক পরিধান করে। বিশেষ করে এই মরু শহরের বাজারগুলোতে গেলে সহজেই এক ফ্রেমে হাজারো রংয়ের সম্ভার চোখে পরবে। নীল রংয়া বাড়িগুলোর বাইরে লাল-হলুদ-বেগুনী রংধারী পোশাক পরিহিত মানুষগুলো যেন যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন সময় স্থানীয়রা এই শহরকে ভিন্ন নামেও যাকে। যেমন বর্ষার সময়ে এই শহরকে তারা ‘সূর্য শহর’ নামে ডাকে।



মন্তব্য চালু নেই