যে পাঁচ জিনিস আপনাকে আরো সুখী করবে

সুতরাং কীসে আপনাকে সুখী করতে যাচ্ছে?
আরো একটু নির্দিষ্ট করে বললে: আপনার মস্তিষ্ককে কীসে সুখী করতে যাচ্ছে?
উত্তর দিচ্ছে স্নায়ুবিজ্ঞান।
১. আপনার জীবনের সবচেয়ে সুখী সময় থেকে গান শুনুন
গান আমাদের মস্তিষ্ককে খুবই কৌতুহলোদ্দীপক উপায়ে প্রভাবিত করে। কোনো গান আপনাকে এর আগে কোথাও সে গানটি শুনে থাকলে সে জায়গার কথা মনে করিয়ে দেবে।
আপনি কি কলেজের সবচেয়ে সুখী মানুষটি ছিলেন? কলেজে থাকা অবস্থায় যে গানটি ভালোবাসতেন সে গানটি বাজিয়ে শুনুন তাহলে। এটি আপনাকে কল্পনায় সে সুখী জায়গায় নিয়ে যাবে। ফলে আপনার মেজাজ-মর্জি ভালো হয়ে যাবে।
২. হাসুন- এবং সানগ্লাস পরুন
মস্তিষ্ক সব সময়ই খুব বেশি স্মার্ট নয়। কিছু কিছু সময় আপনার মন নানা এলোমেলো তথ্য পায় এবং এতে কী অনুভূতি হয় তা নিশ্চিত নয়। সুতরাং মস্তিষ্ক সূত্রের সন্ধান করে। একে বলা হয় ‘বায়োফিডব্যাক’।
বায়োফিডব্যাক হলো শুধু এই ধারণা যে, আপনার দেহে যা কিছু ঘটে তা আপনার মস্তিষ্ক সারাক্ষণই অনুভব করে বা টের পায়। আর অনুভূত তথ্য পর্যালোচনা করে মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, দুনিয়া সম্পর্ক আপনার কী অনুভূতি হওয়া উচিত বা দুনিয়াকে কীভাবে আপনার অনুভব করা উচিত।
আপনি সুখ অনুভব করলে তা আপনাকে হাসায়। কিন্তু বিষয়টি দুভাবেই কাজ করে: আপনি যখন হাসেন, আপনার মস্তিষ্ক সেটি শনাক্ত করতে পারে এবং বলে, ‘আমি হাসছি। তার মানে হলো আমি অবশ্যই সুখী।’
সুতরাং সুখ আপনাকে হাসায়। কিন্তু হাসিও আবার সুখ উৎপাদন করতে পারে।
আপনার কি মন খারাপ? যেকোনোভাবে জোর করে হলেও হাসুন। অন্তত একটি নকল হাসি হাসুন। তাতেও কাজ হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসলে মস্তিষ্ক তা টের পেয়ে অনুভব করে যে, আমি হাসছি তার মানে আমি সুখী।
এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্ককে ২ হাজার বার চকলেট বা ২৫ হাজার ডলার মূল্যমানের আনন্দ দেয়।
৩. জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে ভাবলে আপনার দুনিয়াকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে
আক্ষরিক অর্থেই কথাটা সত্যি। গবেষকরা একগুচ্ছ বৃত্ত একটি স্ক্রিনে প্রতিফলিত করে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সামনে তুলে ধরেন। একটি বৃত্ত সব সময়ই অন্য বৃত্তগুলো থেকে একটু আলাদা ছিল। এটি হয় উজ্জ্বল বা ক্ষুদ্র ছিল।
কিন্তু যখনই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বৃত্তগুলোকে আঁকড়ে ধরতে বলা হয় তখনই উদ্ভট কিছু একটা ঘটে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা যদি বৃত্তগুলোর দিকে তাক করার ব্যাপারে চিন্তা করে তাহলেই তারা উজ্জ্বলতর বৃত্তটির দিকে তাক করার ব্যাপারে আরো ভালো হয়।
কিন্তু তারা যদি কোনো একটি বৃত্ত আঁকড়ে ধরার চিন্তা করে তাহলে তাদের জন্য ক্ষুদ্রতর বৃত্তটি চিহ্নিত করা সহজ হয়।
এর অর্থ কী? নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকলে তাদের দুনিয়াকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়।
সুতরাং আপনি যখনই মানসিক অবসাদে ভুগবেন বা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তখনই আপনার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে ভাবুন। এই ভাবনা আপনার মস্তিষ্ককে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণের একটি অনুভূতি দেবে। যার ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরিত হয়ে আপনাকে আরো ভালো অনুভূতি এনে দেবে এবং আপনার উদ্দীপনা বাড়াবে।
সুতরাং যখনই আপনার মনে হবে দুনিয়াটা ঠিক মতো চলছে না, সবকিছুই ভুল পথে এগোচ্ছে এবং পরিস্থিতি ভয়ানক রুপ ধারণ করেছে। তখন এমন নয় যে দুনিয়াকে বদলে দিয়েই আপনার মস্তিষ্কের অনুভূতি বদলাতে হবে। তারচেয়ে বরং আপনি আপনার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আমার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দ্যেশ্যগুলো কী? আমি কী সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি? এসব নিয়ে ভাবলে আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ শুরু হবে। ফলে আপনি যা করছেন সে ব্যাপারে আপনার ভালো অনুভূতি শুরু হবে।
৪. শান্তির ঘুম ঘুমান
আমরা সকলেই জানি বিষণ্ণতা বা মানসিক অবসাদ লোকের ঘুম নষ্ট করে দেয়। কিন্তু বিষয়টি আবার উল্টোভাবেও ঘটে। ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার ফলেও লোকে মানসিক অবসাদ বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন।
এ থেকে মুক্তির উপায় কী? দিনের মধ্যভাগে গায়ে রোদ লাগান। আর রাতে নিভু নিভু আলো-আধারি পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। ঘুমের জন্য একটি আরামদায়ক স্থান এবং বিছানায় যাওয়ার নির্দিষ্ট সময়সূচি থাকলে আপনার মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে সহজেই। প্রতিরাতে একই সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুমের সময় জার্নাল পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাতেও ভালো ফল পাবেন।
৫. স্নায়ুবিজ্ঞান কীভাবে দীর্ঘসূত্রতার মোকাবিলা করে
আপনার মস্তিষ্ক পুরোপুরি শৃঙ্খলাবদ্ধ নয়। তার চেয়ে বরং একে আপনি রাতের খাবার খেতে বসে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া আপনার একগুচ্ছ আত্মীয়-স্বজনের মতো ভাবুন। যারা ছুটির দিনে সঙ্গ পেতে একত্র হয়েছেন।
মস্তিষ্কের তিনটি অংশ সব সময়ই কার্যকর থাকে।
১. প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স বা সম্মুখভাগের বহিরাবরণ : এই অংশটিই শুধু দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে ভাবে।
২. ডোরসাল স্ট্রিয়েটাম : এই অংশটি আমরা অতীতে কী করেছি না করেছি তা করার ব্যাপারে উৎসাহ যোগায়।
৩. নিউক্লিয়াস অ্যাকুমবেনস : এই অংশ শুধু তামাশামূলক কাজ করায় উৎসাহিত করে।
আপনি যখন উদ্যমী হবেন তখন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স বাকি দুটি অংশকে পরাস্ত করে সঠিক কাজটিই করবে।
আর এভাবেই মস্তিষ্ক ভালো অভ্যাস রপ্ত করে। সুতরাং আমরা কেন প্রায়ই তা করছি না? এর পেছনে যে উপাদানটি প্রায়ই কালপ্রিট হিসেবে কাজ করে তা হলো, মানসিক অবসাদ। সুতরাং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত থাকুন যেকোনো উপায়ে।

সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



মন্তব্য চালু নেই