যে মাজারের খাদেম-পরিচালক সবাই হিন্দু

ভারতে অসহিষ্ণুতা ইস্যু নিয়ে বিতর্ক দিন দিন বাড়ছেই। বিভিন্ন স্থানে উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীগুলো মুসলমান ও খ্রিস্টানদের হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালায়। যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। কিন্তু সে দেশেই এখনো এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে আজো মানুষের মন ছুঁতে পারেনি ধর্ম কিংবা বর্ণ। এমনই একটি জায়গা হলো মেদিনীপুর।

দীর্ঘ ৩২ বছরের বেশি সময় ধরে এক মাজারের খাদেম হিসেবে কাজ করছেন হিন্দুরা। এমনকি মাজারটি পরিচালনাও করেন হিন্দুরাই। ভক্ত সমাগম হয় সর্বধর্ম নির্বিশেষে। মেদিনীপুর শহরের মণ্ডল এলাকার সুফি চাঁদ শাহ বাবার মাজারে গেলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে।

কথিত আছে, ১৯৪০ সালে জেলার মাড়তলা এলাকার বাসিন্দা সুফি হাফেজ তুফানি চাঁদ নামে এক ব্যক্তি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে তিনি মানব কল্যাণকামী মতাদর্শ প্রচার করতেন। এক সময় তার খুব কাছের ভক্ত ছিলেন মেদিনীপুরের বড়বাজার এলাকার নামকরা ব্যবসায়ী চমত সেতুয়া। ১৯৮০ সালের ৯ জুন সুফি হাফেজ তুফানি চাঁদের মৃত্যু হয়। তার দাফন কাজ সম্পন্ন করেন সেই চমত সেতুয়া।

সেতুয়ার কথায়, মহত্বের কারণে সুফি হাফেজ তুফানি চাঁদ পরিচিতি পান চাঁদ শাহ বাবা নামে। তার আশীর্বাদে অনেকেরই সমস্যার সমাধান হতো। মৃত্যুর পরও তার কবরে মানুষের সমাগম কমেনি। পরে সেই কবরই একটি মাজারে পরিণত হয়। আর সেই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন চমত সেতুয়া নিজেই।

বর্তমানে এই মাজারের ওরশ থেকে শুরু করে সমস্ত নিয়ম কানন মুসলিম রীতিতে হলেও তা পরিচালনা করেন চমত সেতুয়া ও তার বেশিরভাগ হিন্দু সদস্য সম্বলিত পরিচালন কমিটি। বর্তমানে এ মাজার খুবই জাগ্রত বলেই লোকমুখে জানা যায়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ওরশ ছাড়াও প্রতি বৃহস্পতিবার বিশেষ এবাদতের দিন। ওইদিন মাজারে হিন্দু-মুসলিম ভক্তের সমাগম হয়।

চমত সেতুয়া বলেন, ‘এখানে আগত ভক্তদের নিঃস্বার্থভাবেই সহায়তা করা হয়। প্রথমে এ কাজে অনেকেই বাধা দিলেও এখন সবাই সহায়তা করেন।’

মাজার পরিচালন কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশের কাছে নজির তৈরি করেছে এ মাজার। যেখানে মানুষ ধর্মের নামে লড়াই করে সেখানে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে এক ছাতার তলায় এনেছেন চাঁদ শাহ বাবাই।’



মন্তব্য চালু নেই