যে রাজ্যে জয়ী হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া যায়

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ৮ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষে জানা যাবে হিলারি ক্লিনটন না ডোনাল্ড ট্রাম্প, কে হচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট।

যদিও বিভিন্ন জরিপের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে হিলারিই দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিশ্চিত করে কিছুই বলার উপায় নেই।

তবে দেশটির নির্বাচনের জয়-পরাজয় সম্পর্কে জানার একটি চমৎকার সূত্রের সন্ধান জানা গেছে। তাহলো ওহাইও অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে যেই প্রার্থী বিজয়ী হন, তিনিই সাধারণত প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকেন।

১৯৬০ সাল থেকে ওহাইও এমন সব প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে, যারা শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। গত ৩০ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ২৮ জনের ক্ষেত্রেই এই কথার প্রমাণ মিলেছে।

এ কারণেই রাজনৈতিক পণ্ডিতরা ওহাইওকে রাষ্ট্রপতিদের সূতিকাগার বলে বর্ণনা করেন।

মার্কিনীদের সঙ্গে কথা বলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যাপারে মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। তবে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের ব্যাপারটা অন্যরকম।

এখানে ভোটাররা হয় হিলারি ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনকেই ভালবাসেন, নয়তো দুজনকেই অপছন্দ করেন।

ওহাইওর সবচেয়ে জনবহুল শহর ক্লিভল্যান্ডের পাশের শহর অরোরার বাসিন্দা জ্যানেটের মতে, “ওহাইও এমন প্রার্থীকে বেছে নেয় যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়। এর পেছনে কারণ হলো আমরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিই যে ভোটটি কাকে দেব”।

তিনি জানালেন, বেশিরভাগ ওহাইওয়ান বাস্তববাদী। প্রার্থীদের মিষ্টি মিষ্টি কথায় তারা ভোলেন না। নির্বাচনের আগে ঝলমলে প্রতিশ্রুতিকে তারা পাত্তা দেন না। জনপ্রিয় টিভি টকশো হোস্ট জেরি স্প্রিংগার একবার এখান থেকে সিনেট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবং তুমুল জনপ্রিয় হলেও ওহাইওয়ানরা তাকে ভোট দেননি।

আমেরিকার নির্বাচনের খেলায় সুইং করার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। মোটামুটিভাবে ১১টি সুইং স্টেট রয়েছে যেখানে ভোটের হিসেব ঝুলে আছে সূক্ষ্ম সুতোয়। অর্থাৎ এসব রাজ্যে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি সমর্থন প্রায় সমান সমান।

তবে সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে ওহাইওর রয়েছে চমকপ্রদ ইতিহাস।

গত ৩০ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ২৮ জনই ওহাইও অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। সেকারণেই রাজনৈতিক পণ্ডিতরা ওহাইওকে রাষ্ট্রপতিদের সূতিকাগার বলে বর্ণনা করেন।

কিন্তু প্রার্থী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ওহাইওয়ানরা প্রার্থীর কোন্ কোন গুণাবলির দিকে নজর রাখেন?

কথা হচ্ছিল ছোট্ট এক শহর পেরিসবার্গের বাসিন্দা লোরির সঙ্গে। তিনি বললেন, এমন একজনকে তিনি বেছে নিতে চান যিনি সৎ ও গণতান্ত্রিক।

ওহাইওতে বহু খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছেন। বহু মানুষ আছেন যারা সামরিক বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা চান তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হোক। সেটা বিবেচনা করেই তারা ভোট দেবেন।

নির্বাচনের প্রচারকার্য চালানো যাদের দায়িত্ব তারা সুইং স্টেট হিসেবে ওহাইওকে বেশি পছন্দ করেন। তার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। এই অঙ্গরাজ্যকে বলা যায় সারা দেশের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ।

এই স্টেটে শহর-গ্রাম, ধনী-গরিবের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ভারসাম্য রয়েছে। এখানে শ্বেতাঙ্গ ভোটার বেশি। হিসপ্যানিক ভোটার অন্যান্য স্টেটের তুলনায় কম।

এছাড়া ন্যাশনাল পালস্ বা জাতীর হৃৎস্পন্দনকে ওহাইওয়ানরা খুব ভালভাবে বুঝতে পারেন।

অ্যানা নরডিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্লিভল্যান্ডে আছেন। এই শহরের পরিবর্তনগুলো তার চোখের সামনেই ঘটেছে। তিনি বলছিলেন, আগে নিরাপত্তার ইস্যুটা খুব বড় প্রশ্ন ছিল, কিন্তু এখন মানুষের প্রধান চিন্তা তার চাকরি-বাকরি।

অ্যানা বলেন, “তারা ভাবেন তাদের চাকরি থাকবে কিনা, বাড়ির মর্টগেজ তারা ধরে রাখতে পারবেন কিনা, কিংবা পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তারা ঠিকমত পালন করতে পারবেন কিনা ইত্যাদি।”

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ওহাইওর ওপর। প্রতিদিনই কোনও না কোনও প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে কেউ না কেউ আসছেন ভোট চাইতে।

প্রচারের কাজে ব্যয় করছেন লক্ষ লক্ষ ডলার। গত শুক্রবারেই ক্লিভল্যান্ডে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করে এক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন পপতারকা জে-যি এবং তার স্ত্রী বিয়ন্সে।

তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। ওহাইওর ভোটাররা কাকে বাতিল করবেন? হিলারি না ট্রাম্পকে?

ট্রাম্প এখানে জিতলে সারা দেশেও তিনি জিততে পারবেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

অন্যদিকে, অতীতে ওহাইওতে না জিতেও ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ১৯৬০ সালের সেই নির্বাচনের নায়ক ছিলেন জন এফ কেনেডি।

ওহাইওর মন জয় করতে হলে হিলারি ক্লিনটনকে হয়তো কেনেডি হতে হবে। -বিবিসি বাংলা অবলম্বনে



মন্তব্য চালু নেই