“যে রাস্তার ছেলেদের ঘর দিতো, সে আজ পুলিশের রিমান্ডে”

১২ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর রামপুরা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে রামপুরা থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের নাম আরিফুর রহমান, হাসিবুল হাসান সবুজ, জাকিয়া সুলতানা ও ফিরোজ আলম খান শুভ।

পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, মানবপাচারকারীদের হেফাজত হতে মো. মোবারক হোসেন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. বাবুল, মো. আব্বাস, মো. স্বপন, মো. আকাশ, মো. মান্না ইব্রাহিম আলী, মো. রাসেল, মো. রফিক ও মো. ফরহাদকে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা রাজধানীসহ আশপাশ জেলা শহর হতে শিশু সংগ্রহ করে পাচার করে আসছে।

image_268999.11217829_10207398642062313_5847396579788637159_n

তবে মাধ্যমিক স্বীকারোক্তিতে তারা কি বলবেন? এই প্রশ্ন এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনায় তুমুল হইচই পড়ে গেছে। তীব্র নিন্দা করে একেকজন লিখছেন, ‘মানব সেবাই যদি হয় মানবপাচার তবে আমরা মানবপাচারকারীদেরই মুক্তি চাই।’

সোশ্যাল মিডিয়ার আটককৃতদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একই সাথে এই ঘটনা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু করেছে।

image_268999_3.untitled-1 copy

গত রবিবার আদালতের শুনানিকালে ম্যাজিস্ট্রেট এক নম্বর আসামি আরিফুর রহমানের সাথে কথা বলেন। ম্যাজিস্ট্রেট জানতে চান, কীভাবে তারা শিশুদের সংগ্রহ করতেন? জবাবে আসামি আরিফুর বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে যেমন- সদরঘাট, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কমপক্ষে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৩ মাস বিভিন্ন ছিন্নমূল বাচ্চাদেরকে পর্যবেক্ষণ করে। যদি দেখা যায় একই বাচ্চা দিনের পর দিন একই স্থানে থাকছে এবং অন্য কোথাও যাচ্ছে না, তখন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে আমাদের শেল্টারে আসার জন্য বলতো। যারা আগ্রহী হতো তাদেরকে নিয়ে আসা হতো।’

এরপর বিচারক ওইসব আসামিদের আর কোনো বক্তব্য শুনতে চাননি। আদালতের বাইরে এসে ওই চার আসামির আত্মীয়-স্বজন এবং উদ্ধারকৃত ১০ শিশুর মধ্যে ছয় শিশুর অভিভাবকদের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে নিঃস্বার্থভাবে সমাজসেবা করতে গিয়ে ফেঁসে যাওয়া ওই চার তরুণের ভাগ্য বিড়ম্বনার কথা। পরবর্তীতে প্রত্যকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
image_268999_4.12007164_528249533995480_379654491_n

তবে আরিফুর রহমানের বড় বোন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, গত প্রায় তিন বছর ধরে তার একমাত্র ভাই ছিন্নমূল বাচ্চাদের উন্নত জীবনদানের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সে তাদের পরিবারকে কোনো সময় দিত না। আমরাও তার কাছে সময় চাইনি। আমরা চেয়েছি তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। কিন্তু আজ এটা কি হচ্ছে? বলেই তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।

একই দিন ১০ শিশুর মধ্যে ৯ জনের সাথে সাংবাদিকরা কথা বললে সবাই একবাক্যে আটককৃতদের প্রশংসা করে। ওইসব বাচ্চাদের মধ্যে স্বপন, বাবলু, আকাশ, রফিক, রাসেলকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমরা সেখানে কেমন আছো? উত্তরে জানায়, সেখানে বেশ ভালো আছে তারা। তোমরা আবারো সেখানে ফিরে যেতে চাও কি না। শিশুরা বলে, হ্যাঁ আমরা ফিরে যেতে চাই।

image_268999_1.12002122_519050244921588_7270552989323427799_n

তখনই পাশে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবল বলে, কিসের ফিরবে? ওইখানে কোনো পড়ালেখার ব্যবস্থা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নেই, কোথায় যাবে এরা? সাথে সাথেই ওই পুলিশের মুখের ওপর কড়া প্রতিবাদ জানায় ওই শিশুরা। তারা বলে, হেয় তো দেহি কিচ্ছুই জানে না।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আটক চারজনের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে তাঁদের ইতিবাচক কাজগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। অদম্য ফাউন্ডেশন নামে ওই চ্যারিটি সংস্থার একটি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে তাঁরা তাদের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তাঁদের ওয়েবসাইট ঠিকানা mojarschool.com। তাঁদের একটি ফেসবুক পেইজও রয়েছে যেখানে কার্যক্রম সম্পর্কে যাবতীয় ছবি ও তথ্য পোস্ট করা হয়।

আরিফ আর হোসাইন নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে রাস্তার ছেলেদের ঘর দিতো, সে আজ পুলিশের রিমান্ডে। হাত পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে বসে আছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, সে মানবপাচারের সাথে জড়িত। বাহ, আমরা কি ভেসে ভেসে এসেছি?’
image_268999_0.1497811_734028620051260_1597901809357322162_n

আসিফুল হক সানি নামের একজন মন্তব্য করেছেন, আরিয়ান আরিফ ভাইকে চিনি দুই বছর ধরে। তাও এই পথশিশুদের জন্য। আরিফ ভাই, জাকিয়া আপু সহ আরও অনেকে নিজেদের টাকা জমিয়ে এদের পড়াশোনা শিখাচ্ছে। আর এদের মানবপাচারকারী বানায় দিলেন? ধন্যবাদ আপনাদেরকে। দিন দিন ভালো কাজ করার সাহস কমিয়ে দেওয়ার জন্য।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষোভের উত্তরে ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের ফেসবুকে বলা হয়েছে, ‘আমি শুধু বুঝে পারছি না আপনাদের সম্পূর্ণ ক্ষোভ যেয়ে পুলিশের উপর বর্তাচ্ছে কেন? এক বাচ্চার চাচা এসে অভিযোগ করলো তার ভাতিজা কে পাওয়া যাচ্ছে না! আনুষ্ঠানিক একটি এজাহার দায়ের হয়েছে বুঝতে পেরেছেন? আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসলে পুলিশকে তার তদন্ত কার্যক্রম চালাতেই হবে এটিই আইনি বাধ্যবাধকতা! এর বাইরে যাওয়ার পুলিশের উপায় নেই! এখন ধরুন ওই বাচ্চার চাচার অভিযোগ যদি আমরা না গ্রহণ করতাম তখন আপনারা বলতেন পুলিশগুলো সব কুলাঙ্গার।’

image_268999_2.11052472_518252075001405_3562305232775257768_n

ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা গেছে, অদম্য ফাউন্ডেশনের এই ‘মজার স্কুলের’ উপদেষ্টা হলেন দুইবার এভারেস্ট জয়ী এম এ মুহিত ও উদ্ভাস এর পরিচালক ও অন্যরকম এর চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ। একই সাথে তারা কোথায় কবে কি কি কাজ করেছেন সেসব ওয়েবসাইটে আপডেট করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই