যে ১০টি সিনেমায় যৌনতা এসেছে ভিন্ন আঙ্গিকে

প্রতিটি মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, ক্ষেত্র বিশেষে বৈচিত্রময়ও বটে এই যৌনতা। বিপুল মহাসমুদ্রে যেমন অনেক কিছু অজানা, তেমনই যৌনতাও অনেক রহস্যে আবৃত। বেশিরভাগ সিনেমায় যৌনতার বিষয়টি কিছুটা আড়াল রেখে দেখানো হয়। ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর ও বড় অভিব্যক্তি হিসেবে এই ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দেয়া হয় পাশ্চাত্যের সিনেমাগুলোতে।
এই প্রতিবেদনে রয়েছে এমন ১০টি চলচ্চিত্র, যেখানে বিশুদ্ধ প্রেমের অন্বেষণ, সহিংসতা, আবেগ এবং কামোন্মাদের প্রতিফলন দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ এই ১০টি সিনেমায় কিছুটা ব্যতিক্রম ভাবে দেখানো হয়েছে আদিম যৌনতা।

দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য হার্ট
১৯৯২ সালে মুক্তি পায় এই ছবিটি। অ্যালাইসেও সাবিয়েলা পরিচালিত এই সিনেমায় উগ্র যৌনতা দেখানো হয়েছে। অলেভারো, একজন তরুণ কবি বেঁচে থাকার তাগিদে নিজের কাজ বিজ্ঞাপন সংস্থায় বিক্রি করতেন। মাঝে মাঝে এক টুকরো মাংসের বদলে নিজের কবিতা বিনিময় করতেন পত্রিকায়। একসময় সে একজন পতিতার সঙ্গে পরিচিত হয়। অ্যানা নামের সেই মেয়েড়িকে ভালোবেসে ফেলে অলেভারো। সেই মেয়েটির জন্য তিন দিনের মধ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য সেই কবি একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এমন কাহিনীর ছবি ‘দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য হার্ট’।

ভিডিওড্রোম
ডেভিড ক্রোনেনবার্গ পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৩ সালে। এই নির্মাতার কাজ সবসময়ই আকর্ষণীয় বিষয়ের উপর নির্মিত হয়ে থাকে। তার সমস্ত ছবিতে থাকে উন্মত্ততা ও বিকৃত মানসিকতা। তা স্বত্বেও তার বানানো সিনেমা দেখা বন্ধ করতে পারেন না তার ভক্ত ও দর্শকেরা।
‘ভিডিওড্রোম’ ছবিটিতে মিডিয়া, রাজনীতি, হিংস্র আক্রমণ- সবই এসেছে একটু একটু করে। কিন্তু তার মধ্যেও ব্যাপক ভাবে এসেছে যৌনতা। একজন টিভি চ্যানেলের মালিক ম্যাক্স তার দর্শক বাড়ানোর জন্য নতুন অনুষ্ঠান বানাতে চায়। তিনি ‘ভিডিওড্রোম’ নামে একটি অনুষ্ঠান খুঁজে পান, যেখানে যৌন অত্যাচার দেখানো হত। একসময় ম্যাক্স দেখতে পেলেন, অনুষ্ঠানটির চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে দর্শকদের কাছে। একদিন তারই প্রেমিকা এই অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহী হয়ে অডিশন দিতে যান। কিন্তু সেই মেয়েটি আর কখনই ফিরে আসে না। প্রেমিকাকে খুঁজতে ‘ভিডিওড্রোম’ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে ম্যাক্স জানতে পারে, অনুষ্ঠানে যা কিছু দেখানো হত, সেগুলো গ্রাফিক্সের মাধ্যমে বানানো হত না। বরং সেখানে চালানো যৌন নির্যাতনগুলো সত্যিই সহ্য করতে হত অনুষ্ঠানের চরিত্রদের। এমন কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ভিডিওড্রোম’ সিনেমাটি।

অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট লাভ
১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় এই চলচ্চিত্রটি। পোল্যান্ডের নির্মাতা ক্রিসটফ কায়স্লোস্কি ছবিটি পরিচালনা করেন। টোমেক নামের একজন অন্তর্মুখী ডাককর্মী তার প্রতিবেশী বৃদ্ধা মহিলার প্রেমে পড়ে। তাকে সে নিজের ঘরে বসে দূরবীন দিয়ে দেখত। মহিলারও টোমেকের আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা ছিল। একদিন টোমেক সাহস করে নিজের ভালোবাসার কথা তাকে জানায়। কিন্তু সেই মহিলা ছেলেটিকে ব্যঙ্গ করতে থাকে। তিনি টোমেককে বোঝাতে চান, ভালোবাসা এক ধরণের বিভ্রম। এখানে যৌনতাই মুখ্য বিষয়। কিছুদিন পর ছেলেটি আত্মহত্যা করে। ছেলেটির মৃত্যুর পর মহিলা নিজের ভুল বুঝতে পারে, এবং নিজের মনে সেই ছেলেটির জন্য গভীরতা টের পায়। এমনই এক কাহিনীর সিনেমা ‘অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট লাভ’।

দ্য ড্রিমারস
ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। ৬৩ বছর বয়সে নির্মাতা বের্নার্ডো বেরসোলুচি পরিচালনা করেন যৌনতা কেন্দ্রিক ‘দ্য ড্রিমারস’ ছবিটি। ছবিটি ১৯৬৮ সালে পটভূমিতে নির্মিত। ম্যাথেউ নামের এক ছাত্রকে নিয়ে সিনেমার কাহিনী। আমেরিকান ম্যাথেউ ফ্রান্সে যায় পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সেখানে ইসাবেলা নামের এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেখানে সে ভালোবাসার উন্মাদনা আবিস্কার করে। যৌনতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তারা। থিও নামের আরেক বন্ধুর সঙ্গে বিকৃত যৌনতায় লিপ্ত হয় ম্যাথেউ। লাজুক স্বভাবের ম্যাথেউ ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে নিজের জগত থেকে। একসময় সম্পর্কগুলো জটিল হয়ে শুরু করে। বন্ধুত্ব ও যৌনতার জটিলতা নিয়েই ‘দ্য ড্রিমারস’ ছবির কাহিনী।

শেম
স্টিভ ম্যাককুইনের পরিচালনায় এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। সফল ও সুদর্শন নিউইয়র্ক বাসিন্দা ব্র্যান্ডন খুবই সহজ ও সাধারণ জীবন যাপন করেন। কিন্তু ভদ্রতার আড়ালে সে নিজের ভয়ঙ্কর তথ্য গোপন রাখে সবার কাছে। ব্র্যান্ডন আসলে একজন যৌন আসক্ত মানুষ। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তার চাহিদা ছিল যৌনতা। একদিন নিজের বোনের সামনে প্রকাশ পেয়ে যায় তার এই নোংরা আসক্তি। এমনই এক কাহিনী নির্ভর সিনেমা ‘শেম’।

ব্লু ভেলভেট
১৯৮৬ সালের চলচ্চিত্র ‘ব্লু ভেলভেট’। ডেভিড লেইঞ্চ পরিচালিত এই ছবির পটভূমিও যৌনতা। কলেজ ছাত্র জেফ্রি তার বাবার অসুস্থ হওয়ার পর বাড়ি যায়। সেখানে এক পরিত্যাক্ত জমিতে একটি কাটা ক্যান দেখতে পায় সে। এই রহস্য উদ্ঘাটন করতে এক গোয়েন্দা কন্যার শরণাপন্ন হয় জেফ্রি। তারা সন্দেহ করে সুন্দরী গায়িকা ডরোথি এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ি। কিন্তু কোন সুরাহা করতে না পেরে জেফ্রি একসময় অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে। সেসময় সে বিকৃত যৌন মানসিক রোগীর সঙ্গে পরিচিত হয়। এমন কাহিনীর ছবি ‘ব্লু ভেলভেট’।

ইরিভারসিবল
গ্যাসপার এনোয়েকিউস পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ২০০২ সালে। এই ছবিটির পটভূমি যৌনতা হলেও এখানে প্রতিহিংসাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন মনিকা বেলুচ্চি, ভিনসেন্ট ক্যাসেল ও অ্যালবার্ট ডিপোন্টল। অত্যাচার, ধর্ষণ, খুনের মত বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। ছবির মুখ্য অভিনেত্রী ধর্ষণের শিকার হয় কথিত প্রেমিক দ্বারা। কিন্তু পরবর্তীতে সেই নারী এবং তার স্বামী এর বিচার না পেয়ে নিজেরাই প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে আসে। এমন ভাবে এগিয়ে যায় ‘ইরিভারসিবল’ ছবির কাহিনী।

দ্য অবসিকিউর অবজেক্ট অব ডিজায়ার
১৯৭৭ সালের সিনেমা এটি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন লুইস বুনওয়েল। এই স্প্যানিশ নির্মাতা গত শতাব্দীর অন্যতম সেরা পরিচালকদের একজন। মেক্সিকো থাকাকালীন তিনি নির্মাণ করেন যৌনতা কেন্দ্রিক ছবি ‘দ্য অবসিকিউর অবজেক্ট অব ডিজায়ার’। ছবিটির কাহিনী ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। একটি ট্রেন ভ্রমণের সময় ম্যাথিউ নামের এক লোক তার প্রেমিকাকে কল্পনা করতে শুরু করে। সেই মেয়েটি তাকে কখনও তার গোপন যৌন বাসনা পূরণ করতে দেয় নি। মেয়েটির সঙ্গে কল্পনায় যৌনতায় মেতে থাকত ম্যাথিউ। মেয়েটিও জানতো ম্যাথিউ শুধু তাকে নিজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়। তারপরেও সেই মেয়েটি একসময় নিজ ইচ্ছায় যৌনতায় লিপ্ত হয় ম্যাথিউর সঙ্গে। এমন কাহিনীর চলচ্চিত্র ‘দ্য অবসিকিউর অবজেক্ট অব ডিজায়ার’।

লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস
ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। এই ছবির পরিচালক বের্নার্ডো বেরসোলুচি। ছবিটি এই নির্মাতার সবচেয়ে আলোচিত ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র। ছবিটির কাহিনী কিছুটা এমন, স্ত্রীর আত্মহত্যার পর আমেরিকান হোটেল ব্যবসায়ী পল প্রেমে পড়েন ফরাসী এক মেয়ের। তার একদিন একটি ফ্ল্যাটে দেখা করে, এবং সেখানে যৌনতায় জড়িয়ে পড়ে দুজনে। দুজনে সম্পর্কে থাকা অবস্থাতেও কেউ কাউকে নিজেদের নামও জানায় না। কিন্তু তাদের একমাত্র সম্পর্ক নিহিত থাকে যৌনতায়। এমন কাহিনীর ছবি ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’।

আই’স ওয়াইড শাট
বিখ্যাত নির্মাতা স্ট্যানলি কুব্রিক পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন টম ক্রুজ ও নিকোল কিডম্যান। আই’স ওয়াইড শাট সিনেমার কাহিনী এমন, অ্যালিস নামের এক বিবাহিত মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় একজন লোকের। তাকে অ্যালিস নিজের যৌন আসক্তির কথা প্রকাশ করে। এবং একসময়ে দুজনে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।



মন্তব্য চালু নেই