যৌন হয়রানি যখন ফেসবুকে

ধরণ মেয়েটির নাম পপি। ফেসবুকে সময় কাটাতেই আসতো মেয়েটি, মাঝে মাঝে নিজের কিছু ছবি আপলোড আর বন্ধুদের সাথে টুকটাক আলাপ। একদিন ফেসবুকে বসেই মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো, ইনবক্সে তার নিজেরই নগ্ন কিছু ছবি। না, আসল নয়। ফটোশপে তৈরি। একটি ফেক আইডি ছবিগুলো দিয়ে তাঁকে হুমকি দিল, কু প্রস্তাবে রাজি না হলে এই ছবি ছড়িয়ে দেবে ফেসবুকময়। এবং হলোও তাই, পপি নামের সেই মেয়েটির মিথ্যা অশ্লীল ছবি ঘুরে বেড়াতে লাগলো সমস্ত চটি পেজ ও আইডিগুলোতে…

কাহিনীটি কাল্পনিক হলেও ফেসবুকে এমন যৌন হয়রানি নতুন কিছু নয়, বরং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যেন দ্রুত বাড়ছে এই ব্যাপারটি। সোশ্যাল মিডিয়ার অন্য মাধ্যম গুলোর চাইতে ফেসবুকেই যেন যৌন হয়রানির পরিমাণ অনেক বেশী।

ইনবক্সে নানা রকম অশ্লীল মেসেজ পাঠানো, বিভিন্ন স্থানে ইঙ্গিতময় কমেন্ট দেয়া, ছবি চুরি করা, আপনার ছবি ব্যবহার করে অশ্লীল পেজ কিংবা ফেক আইডি তৈরি করে যৌন উত্তেজক কথাবার্তা ছড়ানো, কল গার্ল বা দেহপসারিনি হিসাবে আপনার ফোন নম্বর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি সবই পড়ে যৌন হয়রানির আওতায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে নিজেকে বাঁচাবেন এই কুৎসিত বিষয়টির হাত থেকে?

নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রথমে নিজেকেই দেখতে হয়। বিদেশ করে আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে সাহায্য আপনি খুব কমই পাবেন। তাই কুৎসিত ঘটনার শিকার হবার চাইতে নিজেকে কুৎসিত বিষয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টাই মঙ্গল জনক। এক্ষেত্রে যা করতে পারেন-

১) একজন নারী হিসাবে ফেসবুকে নিজের ছবিগুলো পাবলিক না করে রাখাই ভালো। বরং ছবিতে বেশ ভালো রকমের প্রাইভেসি দিয়ে রাখুন যেন কেবল কাছের মানুষেরাই ছবিটি বড় আকারে দেখতে পায়।

২) ফেসবুক সৌন্দর্য প্রদর্শনের স্থান নয়। তাই খুব বেশী আকর্ষণীয় বা যৌন উত্তেজক ভঙ্গিমায় ফেসবুকে ছবি না দেয়াই ভালো। অকারণে অসুস্থ মানসিকতার পুরুষদের আকর্ষণ করে কোন ফায়দা আছে?

৩) নিজের মেসেজ অপশনটি স্ট্রিক্ট ফিল্টারিং-এ দিয়ে রাখুন যেন যে কেউ চাইলেই আপনাকে মেসেজ দিতে না পারে। ফ্রেন্ড লিস্টের বাইরের মেসেজগুলি এর ফলে আদার ইনবক্সে জমা হবে এবং আপনি অশ্লীল মেসেজ থেকে রেহাই পাবেন।

৪) অপরিচিত কেউ মেসেজ পাঠালেই রিড করবেন না। বুঝে শুনে মেসেজ ওপেন করুন। আর এই ধরণের অশ্লীল মেসেজের কোন জবাব দিতে যাবেন না। এতে তারা আরও লাই পেয়ে যায়।

৫) একটা জিনিস মনে রাখবেন, ফেসবুকে যারা নারীদের যৌন হয়রানি করে, তাঁরা কোন দিক দিয়েই ভালো মানুষ নন। তাই এদের কাছ থেকে ভদ্রতা আশা করবেন না। এ ধরণের মানুষ আশেপাশে দেখলেই ব্লক করে দিন। এটাই শান্তিতে থাকার মূল কৌশল।

৬) ফেসবুকে সব মেয়েরাই কোন না কোন গ্রুপের মেম্বার। গ্রুপ যদি কেবল নারীদেরও হয়, তবুও নিজের ছবি আপলোড করুন খুব বুঝে শুনে। নারীদের ছদ্মবেশে অনেক ফেক আইডি লুকিয়ে থাকে এইসব গ্রুপে।

৭) অপরিচিত মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হবার জন্যই ফেসবুক। কিন্তু তাই বলে স্বল্প পরিচিত একজন বন্ধুকে কখনোই নিজের ব্যক্তিগত ছবি, তথ্য , ফোন নম্বর ইত্যাদি দিয়ে দেবেন না। একটু বুঝেশুনে সময় নিয়েই তবেই বন্ধুত্ব করুন। মনে রাখবেন, চকচক করলেই সোনা হয় না।

৮) একটু না দেখেশুনে ফেসবুকে কাউকে অ্যাড করবেন না এবং নিজের জরুরী ইনফরমেশন ও ফোন নম্বর কখনোই পাবলিক রাখবেন না।

নিজেকে রাখুন নিরাপদ, থাকুন মানসিক চাপ মুক্ত।



মন্তব্য চালু নেই