রমজানে বিএনপির ‘ইফতার রাজনীতি’

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে ‘ইফতার রাজনীতি’ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে বিএনপি এ রাজনীতি শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার চাঁদ দেখা গেলে শুক্রবার (১৯ জুন) থেকে রোজা শুরু হবে।

আপাতত রাজপথে সক্রিয় কোনো কর্মসূচি না রেখে রমজানকে দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতির উপযুক্ত সময় হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, বর্তমানে আন্দোলনে বিএনপির কোনো সক্রিয় কর্মসূচি না থাকলেও অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন দলের কেউ কেউ। ফলে রমজানে দলের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে মিলিত হওয়ার একটু সুযোগ পেতে পারেন। যার ফলে নিজেদের মধ্যে একটু আলাপ-আলোচনা করে নিতে পারবেন, যা আগামী দিনে দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাঠে ও রাস্তায় কর্মসূচি না দিয়ে সামাজিকভাবে রমজান মাসটাকে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পালন করাই ভাল। আমি মনে করি, রাজনীতিও ধর্মের বাইরে নয়। রমজান মাসে ইফতার পার্টিতে সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা, কথাবার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এক দল আরেক দলের শীর্ষ নেতাদের ইফতারে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। তা ছাড়া আমাদের দল পুনর্গঠন ও সুসংহত করতে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার এটা সুযোগ পাবেন। যাদের মধ্যে মনকষাকষি আছে তা দূর হয়ে যাবে, যা রমজানের পর দল পুনর্গঠনে কাজে দেবে।’

রমজানের তৃতীয় দিনে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে রাজনীতিবিদদের সম্মানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন। মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ইফতারের আমন্ত্রণ জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার (১৫ জুন) ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে এ আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয়।

এ বিষয়ে পরে ওই দিন আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি চেয়ারপারসন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সম্মানে ইফতার পার্টি দেবেন। দেশের অন্য আরেকটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে আমরা এসেছি। এটা শুধু দাওয়াত দেওয়ার জন্য আসা নয়, এটা প্রত্যাশা করি বলেই বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে আমি ম্যাডামের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, এ রকম সামাজিক অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক বার্তা জনগণের কাছে যাবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে আলেম-ওলামা ও এতিমদের সঙ্গে প্রথম রোজায় ইফতার করবেন।

তিনি আরও জানান, বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির ‘নবরাত্রি’ হলে বিশিষ্ট নাগরিক ও সম্পাদক এবং পেশাজীবী নেতাদের সম্মানে খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিল ২২ জুন। এ ছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার পার্টি রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ২৩ জুন অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলো আলাদা আলাদাভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করবে। এ সব ইফতার পার্টিতে দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ইফতার পার্টিতে খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকতে পারেন। ঢাকা মহানগর বিএনপি প্রতি বছরের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার পার্টি আয়োজন না করতে পারে। রাজধানীর প্রতিটি থানায় ইফতার পার্টির আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ছোট-বড় দলগুলোর ইফতার পার্টির দাওয়াতপত্রও বিতরণ শুরু হয়েছে। লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘৩০ জুন রাজনৈতিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে লেবার পার্টির ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’

রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাব কনভেনশন হলে লেবার পার্টির ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান ইরান।

২৭ জুন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আয়োজিত ইফতার পার্টিতে খালেদা জিয়া যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শায়রুল কবির খান।

এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনপিপি), ২০ দলীয় জোটের বাইরে ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশের ইফতার পার্টিতে বিএনপি প্রধান যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শায়রুল কবির খান। তবে এ ইফাতার পার্টিগুলোর দিনক্ষণ জানাতে পারেননি তিনি।দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই