রসগোল্লা প্রথম তৈরি হয় বরিশালে!

রসগোল্লার মালিকানা নিয়ে হইচই-হাঙ্গামা চলছে আমাদের পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার রাজ্যের মধ্যে। দুই রাজ্যই দাবি করছে রসগোল্লার জন্ম হয়েছে তাদের হাতেই। অথচ যুগ-যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষের রসনা বিলাসের মূল উপকরণ হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় রসগোল্লা।

উড়িষ্যার দাবি, রসগোল্লা তারাই আবিষ্কার করেছে। শত শত বছর ধরে পুরির জগন্নাথ মন্দিরে দেবতাদের ভোগে রসগোল্লা দেয়া হচ্ছে। মন্দিরের মুখপাত্র সুধীর চ্যাটার্জি বলেছেন, প্রতিবছরের অন্তত একবার দেবতার উদ্দেশে এই রসগোল্লা দেয়া হয়।

কলকাতার দাবি, রসগোল্লার আসল আবিষ্কারক তারাই। কলকাতার কে সি দাস পরিবারের দাবি, আবিষ্কারক তারাই। আর সেখানে বহু বছর ধরে রসগোল্লা বিক্রি করা হচ্ছে, মানুষ এটি খেয়ে আসছে।

তবে বাংলাদেশের বনেদি মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী কিংবা ভোক্তাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন রসগোল্লার জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের কারিগরদের হাতেই।

একই ধরনের অভিমত দিয়েছেন একজন খাদ্য গবেষক। আবার এ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে।

উৎসব পার্বণ এমনকি যে কোনো অনুষ্ঠান বা সুসংবাদে মিষ্টি পরিবেশন করা বহুকাল ধরেই বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বহু প্রকার মিষ্টির মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেটি হলো রসগোল্লা।

খাদ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক শওকত ওসমান বিবিসিকে বলেছেন, লিখিত কোনো প্রমাণ না থাকলেও তাদের ধারণা ষষ্ঠ শতকে দক্ষিণাঞ্চলীয় পটুয়াখালীতে পর্তুগিজরা দুধ থেকে পনির, সন্দেশ তৈরি করত। সেগুলো দিয়েই তাদের বাঙালি নারীরা তৈরি করেছে রসগোল্লা বা এ ধরনের মিষ্টান্ন ।

তিনি বলেন, ‘রসগোল্লা আবিষ্কারক হিসেবে কলকাতায় যে নবীন চন্দ্রের কথা বলা হয় তিনি বরিশাল অঞ্চলের লোক এবং পটুয়াখালীর কাছেই থাকতেন।’ তার হাত ধরে শিল্পটি সেখানে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের ভোক্তাদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করেন রসগোল্লা বাংলাদেশেরই। ১৪৫ বছর ধরে মিষ্টান্ন ব্যবসার জন্যে পরিচিত প্রতিষ্ঠান মরণচাঁদ গ্র্যান্ড সন্স। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে ঢাকায়। এর ফার্মগেট শাখার ব্যবস্থাপক রবীন্দ্রনাথ রায়ও বলেন, রসগোল্লা বাংলাদেশের কারিগরদেরই একটি অসাধারণ উদ্ভাবন।

তবে এ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক খুরশীদ জাহান বলেন, বাংলাদেশে প্রাচীন হলেও রসগোল্লার জন্ম এদেশে নয়।

মালিকানা নিয়ে বিতর্ক যা-ই থাকুক রসগোল্লা যে সবসময় বাঙলির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়েই থাকবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারও মধ্যেই। রসগোল্লা দেখে বাঙালির জিভে রস আসবেই।



মন্তব্য চালু নেই