রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

বৃষ্টিতে পুরো প্রকৃতি যেন হয়ে উঠে কালিদাসের সেই বিখ্যাত রামগিরি পর্বত। মানবমনের সুপ্ত আকুতিগুলো ভাষা পায় বৃষ্টির গানে। প্রকৃতিতে যে বাঁধানহারা তোলপাড় আর গর্জন নিয়ে বৈশাখ আসে, যে বৈশাখ মুহূর্তেই চারপাশকে গুড়িয়ে দিয়ে যায় তার রুদ্ররূপ আর লীলাকীর্তন আমরা কবি-সাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাস-কবিতায় প্রত্যক্ষ করি। বিশেষত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার সমগ্র সাহিত্যের বিশাল অংশজুড়ে বর্ষাবন্দনা করেছেন। বর্ষা ঋতুকেই কবি তার কাব্যে সবচেয়ে বেশি আবশ্যিক করে তুলেছেন। নানা আঙ্গিকে উপমায় বর্ষাকে সাজিয়েছেন কাব্যের গরিমায়।

গত ১ মে ছিল শ্রমিক দিবস। শ্রমিকদের শরীর থেকে ঘামের গন্ধ মুছে দিতে সেদিন বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজেছিল রাজধানীসহ সারা দেশ। তখন ছিল বৈশাখের মাঝামাঝি সময়। আর এখন ঘন গর্জনে প্রকৃতিতে তোলপাড় তোলা বৈশাখের জীবন সায়াহ্নকাল। আজ ২৯ বৈশাখ। আর মাত্র দু’দিন বাদেই জ্যৈষ্ঠের শুরু। গাছে গাছে পাকা আম-কাঁছাল ঘ্রাণ ছড়াবে বাতাসে।

ঠিক যেন তার প্রাক-পর্বে নিজের বিদায় বেলায় আরো একবার স্বরূপে ফিরল রুদ্ররুপী বৈশাখ। বৃহ্স্পতিবার (১২ মে, ২৯ বৈশাখ) বিকেল ৫টার পর পরই কর্মব্যস্ত নগরীতে হঠাৎই শুরু হল মেঘের গুরুগুরু গর্জন আর মহুর্মূহু বজ্রপাত। যেন তর সইছিল না। মেয়ের পালক ভেঙে মুহূর্তের বকুল ফুলের মতো ঝরতে শুরু করলো বৃষ্টি। পরক্ষণেই ভারি বর্ষণ।

টানা আধঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর ঘামে ভেজা মানুষগুলোর পাশাপাশি বৃক্ষের পাতারাও যেন সবুজত্ব ফিরে পেল। আমের বোঁটা বেয়ে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে হয়তো নগরীর ছোট ছোট শিশুরা একবারের জন্য ভিজিয়ে নিল হাত-পা। কেউ কেউ হয়তো ছাদের উপর দাঁড়িয়ে মনের হরষে বৃষ্টিস্নাত হল।

বৈশাখের দ্বিতীয় বৃষ্টি বলা যায় আজ। বৃষ্টি মানেই প্রকৃতিতে নবরূপের ছোঁয়া। নতুন প্রাণে সবুজাভ হয়ে উঠা। জীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে দূরে ঠেলে দেয়া। বৃষ্টি মানেই প্রেমিকের বিরহ কাতর মনে যক্ষের আর্তনাদ। অলকাপুরীতে মেঘের কাছে চিঠি লিখা।

তাইতো কবিগুরু বৃষ্টির এমন সুনিপুন বন্দনা করতে গিয়ে তার প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন ‘কল্পনা’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষামঙ্গল’ কবিতায়। “ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরযে জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভ-রভসে ঘনগৌরবে নবযৌবনা বরষা, শু্যামগম্ভীর সরস। গুরুগর্জনে নীল অরণ্য শিহরে, উতলা কলাপী কেকা-কলরবে বিহরে ; নিখিল-চিত্ত-হরষ। ঘনগৌরবে আসিছে মত্ত বরষা ॥ কোথা তোর অয়ি তরুণী পথিক-ললনা, জনপদবধু তড়িত-চকিত-নয়না, মালতীমালিনী কোথা প্রিয়-পরিচারিকা, কোথা তোরা অভিসারিকা । ঘনবনতলে এসো ঘননীলবসনা, ললিত নৃত্যে বাজুক স্বর্ণ-রসন, আনো বীণা মনোহারিকা । কোথা বিরহিণী, কোথা তোরা অভিসারিক॥”



মন্তব্য চালু নেই