রাজধানীতে হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারীরারা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপও কোনও কাজে আসছে না। এতে শুধু সাধারণ মানুষই সব হারাচ্ছে না, সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। অনেক ক্ষেত্রে দলবদ্ধ হয়েও ছিনতাই করছে এই বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা।

বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় ১০-১২ জনের একটি ছিনতাইকারী দল গণছিনতাই চালায়। এদিন তাদের ছুরিকাঘাতে মোবারক হোসেন নামে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য ও তার স্ত্রী সুমী আক্তার গুরুতর আহত হন। তাদের প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই ঘটনায় রাশেদ নামের ঢাকা কলেজের এক ছাত্রও ছিনতাইকারীদের মারধরে আহত হন।

এর একদিন আগে গত বুধবার ভোরে যাত্রাবাড়ীর সুতির খালপাড় এলাকায় আমিনুল ইসলাম নামের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। একই সময়ে সায়েদাবাদ রেললাইনের পাশে খোকন খান নামের আরেক ব্যক্তি ছিনতাইকারীর হামলায় গুরুতর আহত হন। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

রাজধানীর কমদতলীর শ্যামপুর এলাকায় গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে মোহাম্মদ সুমন নামের এক ক্রোকারিজ ব্যবসায়ীকে গুলি করে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঘটনার দিন দুপুরে শ্যামপুরের ব্র্যাক ব্যাংক শাখা থেকে ঋণের পাঁচ লাখ টাকা তোলেন। পরে বন্ধু কালামকে সঙ্গে করে রিকশায় আলমবাগের বাসায় ফিরছিলেন। পথে বোম্বে কারখানার সামনে একটি মোটরসাইকেলে করে আসা তিন ছিনতাইকারী তার পথ আটকায়। তারা হাতে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। পরে তার বাঁ পায়ে গুলি করে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। একইদিন বিকালে রাজধানীর টিকাটুলীতে ছিনতাই করে পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন ফেরদাউস ওরফে আকাশ (৩০) নামে এক যুবক। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১৬ আগস্ট বান্ধবীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনসার আলী লিমনের কাছ থেকে এটিএম কার্ড নিয়ে ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পরে এটিএম বুথের ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।

গত ২৯ জুন পুলিশের গুলিতে শামীম নামের এক ছিনতাইকারী নিহত এবং আবদুল করিম নামের এক ছিনতাইকারী গুরুতর আহত হয়। রাজধানীর পল্টন এলাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময় স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে তারা দুজন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শামীম মারা যান বলে পল্টন থানার এসআই শরিফুল ইসলাম জানান।

এছাড়া, গত কয়েক মাসের ছিনতাই ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, গত ২৫ জুন রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় বাংলালিংকের এক সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভকে কুপিয়ে নগদ এক লাখ টাকা ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের সিমকার্ড নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। গত ২৩ জুন তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীতে বিকাশ ব্যবসায়ী কাজলকে গুলি করে ছয় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। গত ২২ জুন উত্তরায় বিকাশের দুই ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের হিসাব অনুযায়ী জুন মাসে এ বছরের সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয়েছে রাজধানীতে।

গোয়েন্দারা জানান, রাজধানীতে দুর্ধর্ষ কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকে কারাগারে থাকায় ঈদের আগেই আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। তাছাড়া ঈদকে সামনে রেখে মৌসুমি ছিনতাইকারীরাও মাঠে নেমেছে। আট থেকে ১০টি গ্রুপের প্রায় অর্ধশত ছিনতাইকারী রাজধানীর বিভিন্নস্থানে নানা ছদ্মাবরণে ছিনতাইয়ে ওঁৎ পেতে রয়েছে। গত আট মাসে রাজধানীতেই দেড় শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, পকেটমার, অজ্ঞান ও মলমপার্টির অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাট, শপিংমল, পশুর হাট ও ব্যাংকগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে তারা অন্তত দেড় ডজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া ছিনতাই প্রতিরোধ ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দাদের কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদে বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেন, বরাবরের মতো পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। গোটা রাজধানীতে নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে নগদ টাকার লেনদেন বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে বেশি টাকা বহনের ক্ষেত্রে আগে থেকে যাতে পুলিশকে অবহিত করা হয়। তাহলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই