প্রতিটি ইউনিয়ন ছেঁয়ে গেছে লিফলেট পোস্টার ও ফেস্টুন

রাণীনগরে আ’লীগ-বিএনপি উভয়ের গলায় ‘বিদ্রোহের কাঁটা’

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ২৮মে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই নির্বাচনী প্রচারণা অভিযানে মাঠে নেমেছেন আ’লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে (ইউপি) ৩০জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতেই আ’লীগ ও বিএনপির ঘরে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। একটি ইউনিয়নে কোন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। ৩টি ইউনিয়নে বিএনপিতেই বর্তমান চেয়ারম্যানকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থীরা নির্বাচনের জয়ের আসায় চোখের ঘুম/শারীরিক বিশ্রামকে পিছু ফেলে যে যার মতো আর কমর্দন করছেন সবার মাঝে।সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোট প্রার্থনা করে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তারা উন্নয়ন ও জনগনের সেবার প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন ইউনিয়ন নির্বাচনে এসব প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় এখন মহাবাস্ত তাদের যেন ফিরে তাকানোর সময় নেই। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের পাড়া-মহল¬ায়,হাটে-বাজারে ছেঁয়ে গেছে প্রতীক সংবলিত পোস্টার, লিফলেট ও ফেস্টুনে। পাশাপাশি চলছে উঠান-বৈঠক,মতবিনিময় সভা ও কুশলবিনিময়। ভোটারদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল। এছাড়া বেলা ২ ঘটিকা বাজতেই গ্রামে গ্রামে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং করে প্রচারণা শুরু হয়। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের হাওয়া ততই ভারী হচ্ছে।

১নং খট্টেশ্বর রাণীনগর সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আসাদুজ্জামান পিন্টুর (নৌকা) মাথা ব্যাথার বড় কারণ আওয়ামীলীগের (নিজ দলের) বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফা (মোটরসাইকেল)ও আ’লীগের বিদ্রোহী (নিজ দলের) এসএম মাসুদ রানা (বিশু)(ঘোড়া)। দুই জনের ধাক্কাধাক্কিতে অস্বস্তিতে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এখানে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী মো: ফরহাদ হোসেন মন্ডল (ধানের ধীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আনজির হোসেন (আনারস)।

২নং কাশিমপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী মো: আব্দুল মান্নান (নৌকা), বিএনপির মনোনিত প্রার্থী মো: সাইদুর রহমান বাঘা (ধানের শীষ), বর্তমান চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু (আনারস)। বর্তমান চেয়ারম্যান হয়েও বিএনপির দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় মকলেছুর রহমান বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে দুই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির মো: বাবলু প্রামাণিক (লাঙ্গল)।

৩নং গোনা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী মো: আবুল হাসনাত খান হাসান (নৌকা)। এখানেও মাথা ব্যাথার বড় কারণ আওয়ামীলীগের (নিজ দলের) বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র)মো: জাহাঙ্গীর আলম (আনারস) ও স্বতন্ত্র মো: আব্দুল কুদ্দুস শেখ(মোটরসাইকেল)। দুই জনের ধাক্কাধাক্কিতে এখানেও অস্বস্তিতে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। বিএনপির মো: আমিনুল ইসলাম বেলাল (ধানের শীষ) এবং জাতীয় পার্টির মো: মোয়াজ্জিম হোসেন (লাঙ্গল)।

৪নং পারইল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মজিবর রহমান (নৌকা)। বিএনপির মো: মসিউর আলম (টুকু)( ধানের শীষ)। আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গৌতুম কুমার (আনারস) ও স্বতন্ত্র মো: হাফিজুর রহমান (মোটরসাইকেল)।

৫নং বড়গাছা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের সদস্য মো: শফিউল আলম (শফির উদ্দিন)(নৌকা)। বিএনপির আলহাজ্ব মো: রেজাবুল হক (ধানের শীষ)। বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির বিদ্রোহী মো:নজরুল ইসলাম (মোটরসাইকেল)। বর্তমান চেয়ারম্যান হয়েও বিএনপির দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় মো: নজরুল ইসলাম এখানেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

৬নং কালীগ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মো: সিরাজুল ইসলাম বাবলু(নৌকা)। বিএনপির মো: হারুন-অর-রশিদ (ধানের শীষ)। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তাফিজুর রহমান (গোলাম) (মোটরসাইকেল)। বর্তমান চেয়ারম্যান হয়েও বিএনপির দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় এখানেও গোলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে দুই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। দুই জনের ধাক্কাধাক্কিতে অস্বস্তিতে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা এবং জাতীয় পার্টির মো: রাহেদুল মজিদ বাবলু (লাঙ্গল)।

৭নং একডালা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রার্থী মো: রেজাউল ইসলাম (নৌকা)। বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মোসারব হোসেন (ধানের শীষ)। এখানে কোন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় বিএনপি তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো: রেজাউল ইসলাম। বিএনপি প্রার্থী মো: মোসারব হোসেনের পক্ষে মাঠে নেমে কাজ করছেন দলীয় অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। সে কারণে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন তিনি। অপরদিকে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মো: রেজাউল ইসলামও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ নেতাকর্মীরা একযোগে কাজ করছেন।

৮নং মিরাট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মো: রফিকুল আলম (নৌকা)। বিএনপির মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: জামাল উদ্দীন প্রামাণিক (ধানের শীষ) ও বিএনপির বিদ্রোহী মো: ইয়াকুব আলী (আনারস)।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ দুলাল হোসেন জানান, আগামী ২৮মে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের নির্বাচন। আ’লীগ. বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পদে মোট ৩০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯১জন ও ৭২টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ২৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । ৮টি ইউনিয়নে অবাধ,সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।



মন্তব্য চালু নেই