রাণীনগরে খেলার মাঠ ট্র্যাক্টর আর বালু ব্যবসায়ীদের দখলে

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরের কুজাইল ফুটবল খেলার মাঠ ট্র্যাক্টর আর বালু ব্যবসায়ীদের দখলে থাকার কারণে এলাকার উর্তি বয়সের ক্রীড়ামুদি ছেলেদের খেলার মাঠে খোলা-মেলা ভাবে খেলতে না পারাই ধীরে ধীরে তারা ক্রীড়া বিমুখ হয়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মে জরিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ক্লাবের তথাকথিত কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা দাবি করে এক বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খেলার মাঠের বিশেষ অংশ প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে লীজ দেওয়া হয়েছে মর্মে এলাকায় ব্যাপক গুণঞ্জন চলছে। এনিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মারপিটের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউপি’র কুজাইল হাট নামক স্থানে একটি বিশাল খেলার মাঠ রয়েছে। ওই এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের ছেলেদের উম্মুক্ত খেলাধুলার জন্য সরকারি রেকর্ডভূক্ত চক-কুজাইল মৌজার প্রায় এক একর ২৬ শতক জমি রয়েছে। যা উপজেলা সমাজসেবা অফিস কর্তৃক রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত স্থানীয় জাগরণ সংসদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। কিন্ত হঠাৎ করে গত বছরে পরিচালনা কমিটি রহস্যজনক ভাবে পরিবর্তনের পর ওই ক্লাবের নামধারী তিন মোড়ল কাশিমপুর গ্রামের ট্র্র্যাক্টর ও বালু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানের কাছ থেকে গোপনে দুই দফায় অলিখিত ভাবে ত্রিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে কুজাইল ফুটবল খেলার মাঠ নদীর ধারের বেশকিছু অংশ বালু আর ট্র্যাক্টর রাখার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু বাদসাজে স্থাণীয় কিছু ক্রীড়ামুদি উর্তি বয়সের যুবকদের খেলাধূলার অসুবিধার কারণে যাতে মাঠে আর ট্র্যাক্টর নামতে না পাড়ে এজন্য মাঠের তিন ধারে গাছের চারা রোপণ করে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলার এক পর্যায়ে ট্র্যাক্টর উঠা-নামার অসুবিধা হওয়ার কারণে ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান যাদেরকে টাকা দিয়ে ছিলো তাদের সাথে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে বলে তিনি জানান। এক পর্যায়ে বালু ব্যবসায়ীর পক্ষ নিয়ে ক্লাবের কয়েকজনের সাথে স্থানীয় কিছু যুবকদের মারামারির ঘটনায় পরপর দুটি মামলা হওয়ার পর থেকে কুজাইল এলাকায় তিন চারটি গ্রামের বসবাসরত মানুষদের মাঝে চাপা আতংক বিরাজ করছে। এই রেশের সাথে যোগ হয়েছে গত লক্ষীপূজার মেলা উপলক্ষ্যে মেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ২০ টাকা মূল্যের প্রায় ৩৭ হাজার অনুমোদনহীন লটারীর টিকেট বিক্রয় করে খেলা না দিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিয়ে ৬/৭ জন লাপাত্তা হয়ে যায়। টিকেট ক্রেতারা উত্তোজিত হয়ে মেলা কমিটির মঞ্চ সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয়। লটারীর খেলা না দিয়ে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে তারা আবার এলাকায় ঘুড়াফেরা শুরু করলে এলাকাবাসির মাঝে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ইতিমধ্যেই কয়েক দফা মারামারি হয়েছে।
উপজেলার সর্বরামপুর গ্রামের সাবেক জাতীয় দলের ফুটবল তারকা সাইদুর রহমান বাঘা জানান, কুজাইল জাগরণ সংসদ ও খেলার মাঠ আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে পরিচালনা করেছি। এখানে প্রায় ২০ টি গ্রামের ফুটবল প্রেমী যুবকরা খেলা-ধূলার চর্চা করে। আমি কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে প্রতি বছর এই মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। কিন্তু বর্তমান কমিটির সদস্যরা খেলা-ধূলাতো করেই না বরং শুনেছি মাঠের একটি অংশ কোন এক বালু ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছে। যার কারণে স্থাণীয় উর্তি বয়সের যুবকরা সকাল-বিকাল মন খুলে খেলা-ধূলা সহ অন্যান্য শারীরিক চর্চা করতে পারে না। তাই এই মাঠটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।
উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউপি চেয়াম্যান মকলেছুর রহমান বাবু জানান, কুজাইল ফুটবল মাঠে ট্র্যাক্টর ও বালু ব্যবসায়ীর অবৈধ দখলদারীর কারণে দিনদিন মাঠের বড় অংশ দখল করে নিচ্ছে। ফলে স্থাণীয়দের ফুটবল খেলার চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনতিবিলম্বে এই মাঠ দখলবাজদের কবল থেকে উদ্ধার করে জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দরকার হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগীতা আমি নিবো। এই খেলার মাঠ আর ক্লাবকে পুজি করে কতিপয় কিছু লোকজন লক্ষীপূজার মেলা উপলক্ষ্যে মাস ব্যাপী মাইকিং করে লটারীর টিকেট বিক্রয় করে কোন ধরণের খেলা না দিয়ে অত্র এলাকার জনসাধারণের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এনিয়ে মারপিটের ঘটনায় দুটি মামলাও হয়েছে। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রশাসনের আইন শৃংখলা সভায় এর সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাহী অফিসার সহ সবাইকে অবহিত করেছি।



মন্তব্য চালু নেই