রাণীনগরে পুরোদমে গম কাটা-মাড়াই শুরু ॥ দরপতনে কৃষকরা হতাশ

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা: নওগাঁর রাণীনগরে পুরোদমে গম কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। ভাল ফলনের সম্ভবনা থাকলেও চলতি রবি মৌসুমে আশানুরুপ ফলন না হওয়া এবং সরকারি ভাবে গম ক্রয়ের অভিযান শুরু না হওয়ায় দরপতনের কারণে উপযুক্ত বিক্রয় মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়ছে। বর্তমান বাজার দরে গম বিক্রয় করে লাভ তো দূরের কথা বিঘা প্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা লচ গুনতে হচ্ছে। ফলে রোপা-আমন ধানের মতই এবারের গম চাষিদের লচের ঘ্যানি টানতে হচ্ছে। খরচ কম লাভ বেশি হওয়ার এক বুক আশা নিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষের আগ্রহ কিছুটা কমিয়ে গম চাষের দিকে কৃষকরা বেশি মনোযোগী হতেই তারা হোচট খাচ্ছে।

গত বন্যার কারণে এই উপজেলায় রোপা-আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় মাঠে রবিশস্যের উপযুগি জমিতে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম গম চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল চাষীরা। সরকার পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ, গমের বীজ, রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে যথা সময়ে বিতরণ করায় এই এলাকার অসহায় কৃষকদের পক্ষে আগাম জাতের গম বপণ করা সম্ভব হয়েছিল। চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং গম চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকায় গমের ভাল ফলনের আশা করলেও কাটা মাড়াই করে বিঘা প্রতি ৮/৯ মনের বেশি ফলন না হওয়ায় এবং দর পতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষিরা। ভরা মৌসুমে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে যত তারাতাড়ি সম্ভব মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকার ঘোষিত মূল্যে গম সংগ্রহের দাবি জানান কৃষকরা।

জানা গেছে, চলতি রবিশস্য মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবছর উপজেলায় প্রায় ৬শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং গমের ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা না থাকায় ও মাঠ পর্যায়ে গম চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথা সময়ে উপযুক্ত পরামর্শ নজরদারি ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে গম ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় ভাল ফলন ও চরা মূল্যে বিক্রয়ের আশায় বুক বেধেছিল উপজেলার কৃষকরা। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারী পর্যায়ে গম ক্রয় অভিযান শুরু না করায় দিন দিন কৃষকদের ক্ষতির পাল্লা আরোও বেশি ভাড়ি হচ্ছে।

উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের বর্গা চাষি মোঃ আজাদ হোসেন জানান, আমার নিজস্ব জমি না থাকায় অন্যের ৫বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছি। প্রতি বিঘাতে ৮মনের মত গম হলেও জমির মালিককে অর্ধেক দিয়ে প্রতি মন গম ৮শ” টাকার বেশি বিক্রয় না হওয়ায় আমার বড় অংকের লচ হচ্ছে। সরকারি গুদামে গম ক্রয় করলে হয়তো কিছুটা লচ কম হতো।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ মোহাজের হোসেন জানান, চলতি রবি মৌসুমে গম সংগ্রহ অভিযানের কোন নিদের্শনা এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। তবে নিদের্শনা পেলেই সরকার ঘোষিত নির্ধারিত দরে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করা হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, এবারে রাণীনগরের ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমান গম চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে পুরোদমে গম কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকরা ভাল ফলন পাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।



মন্তব্য চালু নেই