বন্যা দূর্গত এলাকায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট

রাণীনগরে বন্যায় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তালিকায় ৮লক্ষ টাকার ক্ষতি

নওগাঁর রাণীনগরে স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলা বাসির দূর্ভোগ, জলবদ্ধতা পিছু ছাড়ছে না। সম্প্রতি সময়ের বন্যায় রাণীনগর প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তালিকায় খামারী ও ব্যক্তি পর্যায়ে গরু মোটা-তাজা করণ পদ্ধতির সাথে জড়িত এই ধরণের মানুষের প্রায় ৮লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত তাপতাহ বিরাজ করলেও বন্যার পানি দ্রুত গতিতে সরে না যাওয়ায় আগামী রবি শস্য উৎপাদনের বীজ তলা সহ গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি সময়ের বন্যায় রাণীনগরের ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৭টি ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ৮হাজার হেক্টর ধান সহ গরু খামারীদের ঘাসের জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। স্ব-স্ব এলাকা থেকে দ্রুত গতিতে বন্যার পািিন না নামায় গোচরণের ভূমিগুলো পানিতে ডুবে থাকার কারণে গোবাদি পশুকে পরিমান মত খাদ্য দিতে না পাড়ায় খামারীরা কম দামে বাজারে গোবাদি পশু বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার পর্যায় থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমান ত্রান সামগ্রী না আসায় গ্রাম পর্যায়ে বানভাসী অসহায় গরীব মানুষদের খাদ্য সংকট সহ নানা ধরনের অসুবিধায় ভূগছে। স্বল্প আয়ের মানুষেরা পরিবার-পরিজনের খাদ্য যোগাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন গোবাদিপশুর খাদ্য যোগার করতে দিনভর বন্যার পানিতে কাঁচা ঘাসের সন্ধানে ব্যস্ত থাকতে হয়। সারা দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও চাহিদামত গো-খাদ্য যোগার করতে পাড়ছেন না।

উপজেলার খামারী সহ ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু লোকজন সংসারের বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে প্রতিবছর বেশকিছু গোবাদিপশু মোটাতাজা করণ করে। কিন্তু সেই ব্যবসা এবার গো-খাদ্যের সংকটে ঘুড়ে দাড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপজেলার বেশকিছু খামারী বলছেন মানুষের খাদ্য সামগ্রীর পাশা-পাশি যদি সরকার গো-খাদ্য স্বল্প মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করলে গ্রামীন পর্যায়ে স্বল্প আয়ের এই সব মানুষরা অনেক উপকৃত হতো।

রাণীনগর প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ের বন্যায় এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪৭টি গ্রামের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, ভেড়া, মহিষের দানাদ্বার খাদ্য ও খড়ের পালা সহ প্রায় ৮লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। দানাদ্বার ও খড় জাতীয় খাবার বেশি ক্ষতি হওয়ায় খামারীরা আগামী দিনে গরু মোটা-তাজা করণ করতে আগ্রহ হারাছে।

বন্যা দূর্গত এলাকায় গোবাদি পশুগুলো নির্ধারত উচু জায়গায় না রাখতে পাড়ায় নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ায় খামারীরা আতংকিত হয়ে ঈদুল আযহাতে বেশকিছু গোবাদিপশু আগেই বিক্রয় করে। তবে বন্যার সময় আক্রান্ত পশুদেরকে প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় ঔষুধ সরবারহ ও উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়ায় প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলার খাজুরিয়াপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, বন্যায় আমার খড়ের পালা পচে গেছে। গরুর খাওয়ার জন্য রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন খড়ের বাজার থেকে ৫ কেজির মত খড়ের আঠি ২৫ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। আমদানি কম থাকায় বেশি করে কিনতেও পারছিনা।

উপজেলার বেলবাড়ি গ্রামের খোকন মোল্লা জানান, খড় কিনতে এসে যে দাম শুনছি তাতে বাড়িতে গিয়ে গরু বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিব। সরকার যদি দ্বানাদার জাতীয় কিছু খাবার বিতরণ করতো তাহলে আমাদের মত গরিব খামারীদের উপকার হত।

এব্যাপারে রাণীনগর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সেলিম উদ্দিন জানান, ভয়াবহ বন্যার সময় উপজেলায় খামারী ও কৃষকরা তাদের পশুগুলো স্বাস্থ্য ধরে রাখার নিবির পরিচর্চা করছিল ঠিক সেই সময় ধেয়ে আসা বন্যার করণে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় পশুর স্বাস্থ্যহানী ও খাবার জিনিস গুলো পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খামারীরা মারাত্মক বিপদে পরে। এরকম কঠিন সময় আমার দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে গোবাদি পশুগুলোকে যথাযথ চিকিৎসা সহ ঔষুধ সরবারহ করায় প্রাণহানীর মত কোন ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে পশুগুলো রোগ-বালাই থেকে প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ্য।



মন্তব্য চালু নেই