রাত ১টায় ফের ‘আল্লাহু আকবর’, কান্নার রোল…

গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট থেকে দ্বিতীয় দফা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি ভেসে আসছিল শুক্রবার (১ জুলাই) রাত ১টার দিকে। একই ধ্বনি দিয়ে রাত ৯টার দিকে রেস্টুরেন্টটিতে ঢোকে সন্ত্রাসীরা। দ্বিতীয় দফায় এ ধ্বনির কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে ভেসে আসছিল কান্না ও চিৎকারের শব্দ।

ওই রাতে রেস্টুরেন্টের অদূরে দায়িত্বরত পুলিশের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান। শনিবার (২ জুন) সকালে রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে এ তথ্য জানান তিনি। বলেন, সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টটি দখলে নেয়ার পর রাত ১টার আগ পর্যন্ত বাড়িটিতে নিশ্চুপ নিশুতি পরিবেশ ছিল। রেস্টুরেন্টের সামনের কয়েকটি কক্ষে বাতিও জ্বলতে দেখা যায়। কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় রাত ১টা বাজতেই ভেসে আসছিল ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি। কিছুক্ষণের মধ্যে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ভেসে আসতে থাকে চিৎকার ও কান্নাকাটির শব্দ। কারা কান্নাকাটি, চিৎকার করছিল কিংবা কী কারণে এ শব্দ তা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিল না।

পুলিশের ওই সদস্য জানান, রাত ৯টার কিছুক্ষণ পর হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট থেকে একটা ফোন আসে গুলশান থানায়। বলা হয়, ‘আমাদের বাঁচান।’ ঘটনা শুনে থানা থেকে একজন এসআই ও একজন কনেস্টেবল পাঠানো হয়। তারা রেস্টুরেন্ট কমপাউন্ডে ঢুকতেই তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে দুর্বৃত্তরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই দুই পুলিশ থানায় ফিরে গিয়ে ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।

রাত ১০টার দিকে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াতের সদস্য নিয়ে ওই রেস্টুরেন্ট কম্পাউন্ডে ঢোকেন গুলশান জোনের এডিসি আহাদুজ্জামান, ডিবির এসি রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন। রেস্টুরেন্ট কম্পাউন্ডে একটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পড়ে থাকতে দেখে ওই দিকে এগিয়ে যান তারা। সোয়াত টিমের এক সদস্য পড়ে থাকা গ্রেনেডটি হাতে তুলে নেন। পরে তার কাছ থেকে গ্রেনেডটি নেন ওসি সালাউদ্দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতেই বিকট শব্দে গ্রেনেডটির বিস্ফোরণ ঘটে। স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এডিসি আহাদ, ওসি সালাউদ্দিন ও ডিবির এসি রবিউল। পরে তাদের ইউনাটেড হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ১১টার দিকে সালাউদ্দিন ও তার কিছুক্ষণ পরেই রবিউল মারা যান। এখনও চিকিৎসাধীন এডিসি আহাদ ও সোয়াতের এক সদস্য।

এর পরপরই জরুরি বৈঠক করেন পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠকে ভোর ৪টায় রেস্টুরেন্টে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভোরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরাও। সে অনুযায়ী ভোর ৪টার দিকে রেস্টুরেন্টের পেছন দিয়ে নামার সময় পুলিশের গুলিতে এক দুর্বৃত্ত আহত হয়। পরে তাকে আটক করে পুলিশ। তবে গুলিবিদ্ধ ওই যুবকের নাম বা পরিচয় জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, রাতের খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দেশি-বিদেশি অতিথিরা। শুক্রবার (১ জুলাই) রাত ৯টার দিকের কথা এটি। আকস্মিক ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ওই রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে একদল সন্ত্রাসী। ঢুকেই মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে, বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেস্টুরেন্ট দখল নেয় তারা।



মন্তব্য চালু নেই