রাবিতে শিক্ষার্থী সমাবেশ : মৃত্যু, মানববন্ধন আর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় আর কতদিন এভাবে চক্রাকারে হত্যা হতেই থাকবে? আর কতদিন আমাদের বিচার দাবিতে এভাবে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হবে। আমরা এ প্রশ্নের জবাব চাই। ‘মৃত্যু, মানববন্ধন, সমাবেশ, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, আবার আরেকটি হত্যা। আবার বিচার দাবিতে আন্দোলন। এই দৃশ্য আমরা আর দেখতে চাই না।’

শিক্ষক আকতার জাহান ও শিক্ষার্থী লিপুসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হত্যাকা-ের বিচার দাবিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আয়োজনে শিক্ষার্থী সমাবেশে বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে এসব কথা বলেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটের ভবনের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সভাপতি পান্ডে আরো বলেন, এই যে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ আজ জ্বলে উঠেছে, আপনারা যদি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন, তবে আমার পক্ষে এ স্ফুলিঙ্গকে থামিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আন্দোলনের পর আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয় জ্বলে উঠবে।

শিক্ষার্থী সমাবেশে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান বলেন, যার ক্ষমতা আছে, সে শিক্ষক-শিক্ষার্থী যাকে খুশি হত্যা করে পার পেয়ে যাবে, আর আমরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে এভাবে আন্দোলন করবো। এভাবে চলতে পারে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে লিপু হত্যার বিষয়ে রুমমেটের থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে, তাহলে দেরি কেন?

এসময় শিক্ষার্থী সমাবেশে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, যেখানে শিক্ষার্থী লাশ হয়ে ড্রেনের পচা পানিতে পড়ে থাকে, শিক্ষক রাস্তায় উপুড় বা চিত হয়ে পড়ে থাকে, আবার একজন শিক্ষক তিনদিন ধরে রুমের মধ্যে লাশের গায়ে পিঁপড়া উঠে যায় আমরা সে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি। আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পঠন-পাঠন গবেষণার পরিবর্তে বাণিজ্যিকরণের আর হত্যাকা-ের ছাপ দেখতে পাই। আমরা আবার সে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করি। আমরা চাই ক্যাম্পাস সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরাপদ হয়ে উঠুক। সঙ্গে সঙ্গে সকল হত্যাকা-ের বিচার নিশ্চিত করা হোক।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের সভাপতি এ এফ এম মাসউদ আখতার, নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ বিপুল কুমার বিশ্বাসসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে বিভাগের সামনে আসে। সেখান থেকে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থী সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ ও ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঝিনাইদহ্ জেলা সমিতি, হরিনাকুকুণ্ডু উপজেলা সমিতি ও কুষ্টিয়া জেলা সমিতির বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

গত ২০ অক্টোবর নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন বিকেলে লিপুর চাচা বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

অন্যদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষক জলির লাশ নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন মতিহার থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন জলির ভাই কামরুল হাসান। কিন্তু তার দেড় মাস পরেও ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট দিতে পারেনি পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই