রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ড : যে তিনটি ইস্যু সামনে রেখে তদন্তে এগোচ্ছে পুলিশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে তিনটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে তদন্তে এগোচ্ছে পুলিশ।

বাগমারা দরগামারিয়া গ্রামে গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব, ব্লগার হত্যার ধারাবাহিকতায় জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড এবং কারো সঙ্গে ওই অধ্যাপকের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব আছে কিনা এই তিন বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি), র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহী নগরীর শালবাগান মোড় এলাকায় খুন হন রাবি অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি নিজ বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত তাকে পেছন থেকে ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে আরএমপি কমিশনার মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘অধ্যাপক ড. রেজাউলের ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল না বলে জানা গেছে। তার পরিবারের সদস্যরা এ রকম কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপরেও ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

আরএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি লেখালেখি করলেও কোথায় লেখেন বা কী নামে লেখেন- তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তবে সম্প্রতি ব্লগার হত্যার ধারাবাহিকতায় তিনিও কোনো উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর টার্গেট কিলিংয়ের লিস্টে ছিলেন কী না- সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেননা হত্যার ধরনে এর আগে ব্লগাররদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার সঙ্গে শতভাগ মিল রয়েছে।’

আরএমপির আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তার ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়েছে। এতে তার ঘাড়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘাড়ে বড় বড় মোট তিনটি কোপ রয়েছে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা গেছেন। এসব ক্লু দেখে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে রাখতেই হচ্ছে।’

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিহত অধ্যাপক কিছুদিন আগে বাগমারার দরগামারিয়া গ্রামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব ছিল। তাই তদন্তের ক্ষেত্রে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে খুন হন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম। তখন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। তবে পুলিশ তা নাকচ করে দেয়।

এ ছাড়া ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের। দুইদিন পর ক্যাম্পাসের বাসার পাশের ম্যানহোলের ভেতরে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

এর আগে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় সকালে হাটতে বের হলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে।



মন্তব্য চালু নেই