রাবি শিক্ষক হত্যা : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম করিম সিদ্দিকীর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে সোমবার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতি শুরু হয় এবং বেলা ১২টা থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করেছেন যে কয়েক মাস আগেই শিক্ষকদের পে স্কেলে গ্রেড বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়ে তাদের যতটা সোচ্চার দেখা গেছে সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তাদের ততটা জোরালো ভূমিকা দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কলাভবনের বটতলায় অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফেডারেশন মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি।

বেছে বেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে- তা এখনো অব্যাহত আছে। পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, এতোজন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল- এই ধরনের কথা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের এইসব হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে ‘মনিটরিং সেল’ গঠনের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এই শিক্ষক নেতা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলব।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেডারেশনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সভা ও বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান মাকসুদ কামাল।

ঘটনার এতদিন পর কর্মসূচি কেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ঘটনার তিন-চারদিন পরেই ফেডারেশনের মিটিং করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানববন্ধন করেছি। এরপর আসলে বিভিন্ন ছুটি ছিল। ৩৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন একযোগে আমরা কর্মসূচি পালন করতে পারি সেজন্য সবার সাথে কথা বলেই আমরা এই কর্মসূচিগুলো নিয়েছি।

সোমবার কর্মবিরতির পর মঙ্গলবার শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রতিবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্যান্য ঘটনাগুলোর মত এটার বিচারকার্যটা যেন বিচারহীনতায় পরিণত না হয়, এটা আমরা শক্তভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে তাকেও বলবো।

তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এই হত্যার ঘটনাটিকে রাজশাহীর স্থানীয় কোন সমস্যা হিসেবে দেখছে না, বরং এ হত্যাকাণ্ডের ফলে সমস্ত শিক্ষকরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।এরকম চারটা ঘটনা হয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটা ঘটনারও কিন্তু সুষ্ঠুভাবে বিচার আমরা দেখতে পাইনি। এখনতো কেউ তার চিন্তা-ভাবনা, মুক্তচিন্তা প্রকাশ করতে চাইলেই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র না হয়, অন্য কোথায় হবে? প্রশ্ন করেন অধ্যাপক আহমেদ, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিরও সভাপতি এবং আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের একজন নেতা। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিটাই আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যায় তার বিভাগের ছাত্র শরিফুল ইসলাম জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে তার বিষয়ে তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বাবা ও ভাই এবং আরও তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা বলছে, শরিফুল প্রায় এক বছর থেকে ‘নিয়মিত’ ক্লাস করে না। ২৩ এপ্রিল রাজশাহীর শালাবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিনই নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ। পরে গোয়েন্দা পুলিশকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই