‘রামপাল প্রকল্প বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নষ্ট করবে’

সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প শুধু বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করবে না, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিনষ্ট করবে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে কলঙ্কিতও করবে বলে মন্তব্য করেছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ।

কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সরকারের উচিৎ হবে একগুঁয়েমী ত্যাগ করে অবিলম্বে রামপাল চুক্তি বাতিলসহ সুন্দরবনবিনাশী বনগ্রাসী সব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেছেন, সেই সঙ্গে ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ গ্রহণ করে এর বিকাশে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একাজে সরকার যতো দ্রুত এগিয়ে আসবে ততো আমরা বিবিধ ক্ষতি কমাতে পারবো।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জাতীয় কমিটি থেকে আমরা বহুবার সরকারকে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করে দেখিয়েছি যে, কোম্পানি যে দূষণ দূর করার কাহিনী বলছে দুনিয়ায় তার কোনো গ্রহণযোগ্য দৃষ্টান্ত নেই। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার দরপত্র ও অন্যান্য দলিলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকেই দেখা যায় যে, এতে দূষণ বিপদমুক্ত মাত্রায় দূর হবে না, অনেকক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হবে মাত্র। তাছাড়া এগুলো ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ও দাম বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, যে তথ্য গোপন করা হচ্ছে, এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবেও তা আর্থিকভাবে খুবই অযৌক্তিক হবে।

বিবৃতি তারা বলেন, ‘সরকারের তদারকির কার্যকরিতা নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলে বলেছি, যেখানে সচিবালয় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে বুড়িগঙ্গা দূষণে প্রায় মৃত; সেখানে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে সরকারি তদারকি ঠিকঠাকভাবে কাজ করবে এটা কে বিশ্বাস করবে? সুন্দরবন এলাকায় তেল ও কয়লার জাহাজডুবির পর সরকারের ভূমিকাও আমাদের স্মরণে আছে। উপরন্তু সুন্দরবন এমন একটি অতুলনীয় সম্পদ যাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা আরো বলেন, সম্প্রতি ইউনেস্কো টিম বাংলাদেশে এসে সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শন করে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সরকারকে প্রদত্ত রিপোর্ট দেখিয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ সব বাণিজ্যিক তৎপরতা বন্ধ করতে বলেছেন।

নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ইউনেস্কো টিম যখন বাংলাদেশ সফর করে তখন তাদের পরিকল্পনা ছিলো, দুইপক্ষের কথাই তারা শুনবেন। কিন্তু সরকার নানা বাহানা সৃষ্টি করে আমাদের সাথে কোনো সভা করবার সময় রাখেনি। তারপরও তারা স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ সিদ্ধান্তে এসেছেন। কোম্পানি, ভূমিগ্রাসী ও বনগ্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত না হলে, নির্মোহ বিচার বিশ্লেষণ করলে সরকারও যে একই সিদ্ধান্তে আসবে সেটা আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি।

ইউনেস্কোর সর্বশেষ রিপোর্টের তাগিদ থেকে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার যদি আগের মতোই এসব গুরুতর বিষয় উপেক্ষা করে তাহলে সুন্দরবন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে বিষয়টি এভাবে উপস্থিত হবে যে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা প্রকৃতিপ্রদত্ত এক অসাধারণ সম্পদ ধরে রাখার যোগ্যতা রাখে না, এদেশের মানুষের সেই সক্ষমতা বা পরিপক্কতা নেই।



মন্তব্য চালু নেই