রিকশাওয়ালা কারো শালা, কারো আবার দুলাভাই

সকাল ৭টা। আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড। সাতসকালে অফিসগামী নারী-পুরুষের তোড়জোড়। কেউ দ্রুত হাঁটছেন। কেউ ‘এই খালি’ বলে হাঁক ছাড়ছেন। কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বাসে উঠবেন বলে। এই তাড়াহুড়োর মধ্যেই কারো গায়ে ধাক্কা লেগে যাচ্ছে। একজন বলে উঠছেন ‘ধুর ভাই’, অপরজন ‘সরি’। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই একই ব্যস্ততাচিত্র। এর মধ্যেই হেলপার-যাত্রী, রিকশাওয়ালা-যাত্রীর ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা। সেই বিতণ্ডা গালাগালিতে, হাতাহাতিতে পৌঁছে ‘ছোটখাটো’ ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। মুহূর্তেই মিলিয়ে যাচ্ছে সেসব।

রাজধানীর এই চিত্র সবার জানা। রোববার সকালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইডেন মহিলা কলেজের পাশ দিয়ে যেতেই কানে এলো রিকশাওয়ালা-যাত্রীর বচসা। শুরুটা নিরীহগোছের ছিল। এক যাত্রী খুব দ্রুত রিকশাওয়ালাকে বললেন, ‘সেগুনবাগিচায় যাবে? কত?’ রিকশাওয়ালা উত্তর দিলেন, ‘৬০ টাকা’। মুহূর্তেই মাথার চান্দি যে গরম হলো যাত্রীর তা বোঝা গেল এই উক্তিতে, ‘শালা, থাপড়াই গাল ফাটাই দিবো’!

রিকশাওয়ালাও কম যান না। বয়সে তরুণ। বছর তিরিশের বেশি হবে না। বললেন, ‘অই মিয়া, থাপড়াইবেন ক্যান? জামা-জুতা ভালা পরছেন, মুখে গাইল ক্যান?’ যাত্রী বললেন, ‘প্রত্যেক দিন সেগুনবাগিচায় যাই ৩০ টাকা দিয়ে। তুমি ৬০ টাকা বল কীভাবে। ডাবল চাও কেন?’ রিকশাওয়ালা বললেন, ‘পোষাইলে যান, নাইলে যাইয়েন না। শালা ডাকলেন ক্যান?’

লে হালুয়া! এবার যাত্রী রিকশাওয়ালার কলার চেপে ধরে বললেন, ‘বেয়াদপ। রিকশা থেকে নাম।’ এর পর ‘শালা, শুয়োরের বাচ্চা’ বলেই রিকশাওয়ালাকে থাপ্পড়! রিকশাওয়ালা রসিক। রিকশাওয়ালা খ্যাপাটে। যাত্রীর গায়ে হাত না তুললেও চিল্লিয়ে বলছেন, ‘গালি দ্যায় ক্যান? শালা ডাকে ক্যান? আমি তো আর কারো দুলাভাইও হইতে পারি!’

দ্রুতগামী পথচারী কেউ একটু উঁকি দিয়ে যাত্রীকে ‘আরে ভাই যান তো’ বলে সটকে পড়ছেন। কেউ ‘বাদ দেন, বাদ দেন’ বলে থামিয়ে দিতে চাইছেন। অন্য রিকশাওয়ালারা ক্রিংক্রিং শব্দ তুলে রাস্তা ছাড়তে বলছেন। বাসচালক কান ফাটিয়ে হর্ন বাজাচ্ছেন। এর মধ্যেই আরেক রিকশাওয়ালা ওই যাত্রীকে ‘৪০ টাকা’ বলতেই তিনি রিকশায় উঠলেন। গজরাতে গজরাতে ছুটে গেল রিকশা। হাওয়ায় মিলিয়ে গেল বচসা!

এই বচসা দেখেশুনে হঠাৎই মনে পড়ল ছোটবেলায় শোনা একটি গান। গানের কথা ছিল ‘রিকশাওয়ালা কারো শালা, কারো আবার দুলাভাই’… গীতিকার কে, সুরকার কে তা জানা নেই। তবে গীতিকার যে এমন বচসা শুনেই এই অমিয় বাণী লিখেছিলেন তা নিশ্চিত হলাম!

যাত্রী চলে যেতেই কথা হলো ‘খ্যাপাটে’ রিকশাওয়ালার সাথে। বললাম, ‘কী ব্যাপার, রাগলা ক্যান?’ বলল, ‘আরে ভাই, আমি ভাড়া বেশি চাইতেই পারি। তাই বইলা গাইল দিবো? গরিব বইলা কি পইচা গেছি?’

সাথে সাথে অন্য রিকশাওয়ালারাও যোগ দিল তার সাথে। বলল, ‘ভাই, প্রতিদিন যে কত গাইল শুনতে হয়’! আমি কী উত্তর দেব। ‘থাক ভাই, মাথা ঠাণ্ডা কর’ বলে সটকে পড়লাম।

কাল সকালেও হয়ত এখানেই আবার নতুন কোনো মানুষের বচসা শুনতে পাব। রাজধানী ঢাকার সব স্থানেই হয়ত বচসা চলছে। অঞ্জন দত্তের গানের মতো হয়ত প্রতিদিনই ‘ঝগড়াঝাটি তক্কোবিতক্ক বাকবিতণ্ডা চলবে’। আমি ছোটবেলায় শোনা ‘রিকশাওয়ালা কারো শালা, কারো আবার দুলাভাই’ গানটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে ছুটলাম!বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই