রিশার স্মরণসভায় কান্নার রোল, দ্রুত বিচার দাবি

সুরাইয়া আক্তার রিশার হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার দাবি করেছেন এই কিশোরীর বাবা মা, স্কুলের অধ্যক্ষ, সহপাঠীরা। দুপুরে রিশার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও শোকসভায় এই দাবি উঠে।

সভায় রিশার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি রিশার বাবা-মা, শিক্ষক আর সহপাঠীরা। বারবারই তাদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছিল। সভায় স্রোতাদের চোখও ছিল ছল ছল। বারবার চোখের জল মুছলেও আবার জলে ভরে যাচ্ছিল চোখ।

রিশার স্মরণে আলোচনা সভা হবে, আগেই ঘোষণা হয়েছিল। তাই ক্লাস হয়নি আজ। তবু সকাল থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা দলে দলে আসতে থাকে স্কুলের দিকে।

গত ২৪ আগস্ট রিশাকে ছুরিকাঘাত করা হয় স্কুলের পাশেই। চারদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে। শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল, দর্জি ওবায়দুল খানই ছুরিকাঘাত করেছে রিশাকে।

সকালে নীলফামারীতে ওবায়দুল ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। এই খবরটি জেনেই স্কুলে আসে সবাই। প্রধান সন্দেহভাজন ধরা পড়লেও উচ্ছ্বাস ছিল না কারও মধ্যে। এর কারণটাও স্পষ্ট করে শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মুনতাসির মাহমুদ। মুনতাসিরের প্রতিক্রিয়া ছিল এমন, ‘আমরা আপাতত স্বস্তিতে আছি। তবে আমরা উচ্ছ্বসিত নই, যতদিন না ওবায়দুলের শাস্তি হবে আমরা শান্তি পাবো না।’

শোকসভায় কান্নার রোল দুপুরে রিশার স্মরণে মিলাদ ও শোকসভায় যোগ দেন এই কিশোরীর বাবা রমজান আলী ও মা তানিয়া আহমেদও।

রিশার বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের হত্যার বিচার যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই উদ্যোগ নিন।’

মেয়ের স্মৃতিচারণ করে রমজান আলী বলেন, ‘আমার মেয়েটি প্রতিদিন খাওয়ার আগে বলতো, বাবা ভাত খেতে এসো, আমি এখনও ভুলতে পারি না। মনে হয় আমার মেয়েটি বলছে, বাবা খেতে- বাক্যটি শেষ করতে পারেননি রিশার বাবা, তার আগেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

রিশার মা তানিয়া আহমেদ বলেন, ‘আমি প্রতিদিন মেয়েটিকে স্কুলে আনা নেওয়া করতাম। সেদিন আমি অসুস্থ ছিলাম, ডায়াবেটিক বেড়ে গিয়েছিল। মেয়েটা বলেছিল, মা ডায়াবেটিক বেড়েছে, তুমি বিশ্রাম নাও। এরপর সকালে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে’- এতটুকু বলার পর রিশার মায়ের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ‍উঠে। তিনিও এরপর আর কিছু বলতে পারেননি। কেবল বাবা-মা নয়, এ সময় স্রোতাদের চোখেও ছিল জল।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসাইন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাই, এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এক মাসের মধ্যে শেষ করুন।’ এই স্কুলে রিশার ভাই বোন এখন থেকে বিনা খরচে পড়বে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

স্কুলের প্রভাতি শাখায় পড়তো রিশা। এই শাখা প্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিশা অনেক মনযোগী শিক্ষার্থী ছিল। যেদিন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেইদিনও সে এক পরীক্ষা দিয়েছে। আমি সে খাতা রেখে দিয়েছি।’ রফিকুল বলেন, ‘রিশার বাবা মা যে কষ্ট পেয়েছে তার সঙ্গে আমাদের কষ্টের তুলনা নেই। তবে শিক্ষক হিসেবে আমাদের সবার সন্তানের মতই ছিল সে। তার জন্য আমাদের কষ্টও কম না। তার মৃত্যুর খবর শুনে আমি কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি।’

রিশাকে হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠী রহমান রাব্বী বলে, ‘হামলার পর আমি ওবায়দুলের কলার ধরতে পেরেছিলাম। কিন্তু সে ছিটকে বের হয়ে যায়। আমি সব দেখেছি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি’-বলে কেঁদে ফেলে রাব্বীও।

রিশার শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মুসতাসির মাহমুদও আবেগঘন বক্তব্য দেন। মুনতাসির বলেন, ‘যখন রিশাকে আইসিইউতে নেয়া হয়, তখন আমাকে বলেছিল, ভাইয়া একটু হাতটা ধরো, আমাকে উঠাও, খুব কষ্ট পাচ্ছি।’ এই পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন মুনতাসিরও। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘কলেজের সামনে আমার ছোট বোনকে হত্যা করে অবলীলায় ছুরি নাড়াতে নাড়াতে চলে গেলো, অথচ আমরা কিছু করতে পারলাম না, এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, আমি আপনাদেরকে বলে যাচ্ছি রিশা হত্যার বিচার হবেই এবং দ্রুত বিচারের জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তার এই বক্তব্য হাততালি দেয় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।



মন্তব্য চালু নেই