রোগের নাম হিমোফিলিয়া

রোগের নাম হিমোফিলিয়া। সহজভাবে বলা যায়, হিমোফিলিয়া হচ্ছে রক্তপাত বন্ধ না হওয়ার রোগ । অন্য কথায়, রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যাওয়া। এই রোগটি সম্পর্কে অজ্ঞাত অনেকেই। তাই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস আজ। চিকিৎসাবিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক স্ন্যাবেল-এর জন্মদিন স্মরণে ১৯৮৯ সালে দিনটির সূচনা করে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়া।

রক্তজনিত নানা সমস্যা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোই দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য। একটি উদাহরণ দিলেই হিমোফিলিয়া রোগটি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। শৈশবে হাত-পা কাটেনি এমন লোকের সংখ্যা বিরল। হাত-পা কেটে গেলে সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে একটা কালচে চলটা পড়তে দেখা যায়। আসলে রক্ত পড়া বন্ধ করার উদ্দেশ্যে শরীর তার স্বাভাবিক নিয়মেই রক্ত জমাট বাঁধিয়ে এই চলটা তৈরি করে। আর এই রক্ত জমাট বাঁধানোর কাজটি করতে অনেকগুলো প্রোটিন সাহায্য করে। এদের বলা হয় ব্লাড ক্লটিং ফ্যাক্টর বা রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান । কিছু কিছু মানুষের শরীরে এই উপাদানগুলোর মধ্যে একটি উপাদান (factor VIII অথবা factor IX) কম তৈরি হয়। এদেরই বলা হয় হিমোফিলিয়ার রোগী।

এদের কোথাও কেটে গেলে সহজে রক্তপাত বন্ধ হয় না। কখনো কখনো রক্তপাত বন্ধের ব্যবস্থা করতে করতে রোগীর মৃত্যুও ঘটে। এমনকি নাক পরিষ্কার করতে গিয়ে খোঁচা লেগে রক্তপাতে মৃত্যু হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে।

তাই নিজের সন্তানটির কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ হতে অস্বাভাবিক সময় লাগছে অথবা পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে হাত-পায়ের জয়েন্ট ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। সন্দেহ হলে টেস্ট করিয়ে জেনে নিন তার হিমোফিলিয়া আছে কি না।

ছোটবেলায় অনেক হিমোফিলিয়া রোগীই মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়, কিন্তু বড় হওয়ার পর দেখা যায় রাস্তায় সামান্য অ্যাকসিডেন্ট (যাতে মারা যাওয়ার কথা না) করে সে রক্তপাতে মারা যাচ্ছে অথবা কোনো ধরনের অপারেশন করতে গিয়ে সে রক্তপাতে মারা যাচ্ছে। আগের থেকেই যদি জানা থাকে যে সে হিমোফিলিয়ার রোগী, তাহলে সে চিকিৎসা গ্রহণ করে এবং অপারেশন করার আগে ডাক্তারকে সতর্ক করে দিয়ে এসব মারাত্মক অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা হলো, রোগীর শরীরে যে উপাদানটি কম তৈরি হচ্ছে, তা প্রবেশ করানো। উপাদানগুলো এখন বোতলজাত অবস্থায় পাওয়া যায়। রোগী সেটা নিয়মিত ও গ্রহণ করতে পারে, আবার জোগাড় করে রেখে দিতে পারে, যাতে কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে গ্রহণ করা যায়। যদিও নিয়মিত গ্রহণ করাটাই বেশি ভালো (সফলতার সম্ভাবনা ৯৩%), কিন্তু খরচ পড়ে অনেক বেশি ।

তবে মনে রাখতে হবে, রোগটি শুধু পুরুষদের হয়। মেয়েদের হলেও সুপ্ত অবস্থায় থাকে, তাই এদের রোগী বলা হয় না, রোগের বাহক বলা হয়। রোগটি বংশগত, তাই রোগী বাবা অথবা বাহক মায়ের কাছ থেকে তাদের বাচ্চারাও একই রোগের শিকার হয়।

হিমোফিলিয়া নিয়ে হেলাফেলা নয়, সতর্ক হোন এখনই।



মন্তব্য চালু নেই