রোহিঙ্গা নির্যাতন সুচি’র ধর্মীয় গোঁড়ামি!

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ধারাবাহিক নির্যাতনের ঘটনার পরও নিশ্চুপ রয়েছেন দেশটির কথিত অহিংস গণতন্ত্রবাদী আন্দোলনকারী নেত্রী অং সান সুচি। এরই মধ্যে তার নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে বিশ্বের মানবতাবাদীদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শান্তিতে নোবেল জয়ী সুচির পদক ফেরতেরও দাবি উঠেছে এজন্যে।

ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার নির্যাতন চালালেও সরকারে প্রভাবশালী অবস্থানে থাকা সুচির নিশ্চুপ থাকার কারণ খুঁজছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। যে নারী একসময় আপোসহীন অবস্থানের কারণে বছরের পর বছর গৃহবন্দী থেকেছেন। স্বামী হারিয়েছেন, সন্তানদের থেকে দূরে থেকেছেন সেই সুচি’র নিশ্চুপ অবস্থানের পেছনে তার ধর্মীয় গোঁড়ামিকেই বড় করে দেখা হচ্ছে। কেননা এর আগেও তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির উদাহরণ দেখিয়েছেন। সমালোচিতও হয়েছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সফররত রাষ্ট্রদূতকে এমন অনুরোধও জানিয়েছেন যে এসব সংখ্যালঘু মুসলিমদের যেন রোহিঙ্গা নামে ডাকা না হয়।

সম্প্রতি ‘চেঞ্জ ডট অর্গ’ নামের একটি ওয়েবসাইট সুচির নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদনে জনসমর্থন আদায় শুরু করেছে। এই বিষয়ে অনলাইনটি বিবিসির এক সাংবাদিক মিশাল হোসেন সম্পর্কে সুচি যে মন্তব্য করেছিলেন, তারও উল্লেখ করেছে।

২০১৩ সালে বিবিসির মিশাল হোসেনকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে অং সান সুচিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে মিয়ানমারের আচরণ সম্পর্কে বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সেই সাক্ষাৎকারের পর অং সান সুচি মন্তব্য করেছিলেন, ‘সাংবাদিক মিশাল হোসেন যে একজন মুসলিম সে বিষয়ে কেউ তো আগে আমাকে জানায়নি!’

চেঞ্জ ডট অর্গের আবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির মুখ থেকে এরকম কথা শুনে অনেকেই তখন অবাক হয়েছিলেন।

অং সান সুচি’র শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কারণে বিশ্বের বহু মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে থাকে। কিন্তু তার ওই ধরনের মন্তব্য বহু মানুষকে ক্রুদ্ধ এবং হতাশ করেছিল। এরপরই পরিস্কার হয়ে যায় মায়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি সুচির মনোভাব আসলে কী!

এমনকি গেল সেপ্টেম্বরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুচিকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হামলা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তার দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে শুধু শুধুই বড় করে দেখছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।’

এতদিনেও যে তার মনোভাবের পরিবর্তন আসেনি, সুচি’র সেই বক্তব্য আর এখনও নিশ্চুপ থাকাই তার বড় প্রমাণ। মিয়ানমারের রাজনীতিতে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার পরও নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত বিজয়ীর নির্লিপ্ততা বিস্মিত করেছে মানবতাবাদীদের।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন US Human Rights Network এর ওয়েলস স্মিথ বলছেন, বর্ণবাদী ও ধর্মীয় গোঁড়ামির এই নারীর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী উপমা এখন মানবতা আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই যেন পরিহাস করছে!



মন্তব্য চালু নেই