রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা হবে

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তৈরিকৃত আনান কমিশনের প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্য লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামে।

রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও পরিস্থিতি জানতে কক্সবাজারে পরিদর্শন করেছেন আনান কমিশন তথা মিয়ানমারের রাখাইন কমিশনের সদস্যরা।

কমিশনের সদস্য ঘাসান সালামে জানান, এক বছরের জন্য জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে মিয়ানমার। মিয়ানমারের ছয় নাগরিক ও তিন বিদেশি বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত কমিশন রাখাইন রাজ্যের সব নাগরিকের মানবিক উন্নয়ন, নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কি করা প্রয়োজন তা নিয়ে কাজ করছেন। তারই অংশ হিসেবে ওই রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসা মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে কমিশন সদস্যদের বাংলাদেশে আসা।

তিনি জানান, তার দুই দিন ধরে কক্সবাজারের কয়েকটি স্পটে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তাদের কি সমস্যা তা জেনেছেন। তবে রাখাইন রাজ্যের সমস্যাপূর্ণ এলাকায় কমিশনের সদস্যরা এখনো পৌঁছতে পারেননি। বাংলাদেশ থেকে ফিরে ওই রাজ্যে যেতে চেষ্টা করবেন। এরপর সমস্যা সম্পর্কে উপাদানগুলোকে নিয়ে কমিশন সুপারিশ তৈরি করবে, যা আগামী আগস্ট মাসে জমা দেবেন। পরবর্তীতে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেশ করা হবে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কি ধরনের কথা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ঘাসান জানান, তারা (রোহিঙ্গারা) যা বলেছেন তা শুনেছেন কমিশন সদস্যরা। এটা প্রতিবেদনে আসবে।

সোমবার প্রতিনিধি দলটি উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও পরিস্থিতি জানতে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তিগুলো পরিদর্শন করেন কমিশনের ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল। আজ সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটের দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে যান তারা। প্রতিনিধি দলটি ওখানে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। ওখানে নতুন করে আসা ১৮ জন রোহিঙ্গা ও ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেন।

এরপর প্রতিনিধি দলটি যান অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ওখানে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য ঘাসান সালামে।

ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য মিয়ানমারের নাগরিক উইন স্রো ও আই লুইন।

এ ছাড়াও এই সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বাকী বিল্লাহ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, ইউএনএইচসিআর ও আইওএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবু সিদ্দিক জানান, কমিশন সদস্যদের সঙ্গে ৪০ জন নারী, ১২ জন শিশু ও ১৮ জন পুরুষ আলাপ করেন।

ওখানে আলাপ করা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইউনুছ (২২) জানান, প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের তাদের কি ধরনের নির্যাতন চালিয়েছে তার বর্ণনা জানতে চেয়েছেন। এর সকল কিছু তিনি জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা চেমন আরা (৩০) জানান, টানা পাঁচ বার মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বাংলাদেশে কিভাবে পালিয়ে এসেছেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন।

কুতুপালং থেকে প্রতিনিধি দলটি দুপুর ২টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। ওখানে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনসহ পুলিশ ও বিজিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলটি বিমানে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, বৈঠকে প্রতিনিধি দলটি সীমান্ত সুরক্ষা, রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থানসহ নানা বিষয়ে আলাপ করেন। প্রতিনিধি দলটি এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন বলে আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, রোববার রাখাইন কমিশনের (আনান কমিশন নামে সমধিক পরিচিত) ৩ সদেস্যের প্রতিনিধি দলটি প্রথমে উখিয়ার বালুখালীর গহীন পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তি এবং পরে টেকনাফের লেদা ও নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা বস্তিগুলো পরিদর্শন করেন। আর আজ কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তিগুলো পরিদর্শন করেন তারা।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর অন্তত ৬৬ হাজারের বেশী শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই