‘লজ্জায় পড়ে টাকা ফেরত দেওয়া উচিত’

বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হয়ে যাওয়া টাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বাংকের লজ্জায় পড়ে ফেরত দেওয়া উচিত।

মঙ্গলবার অর্থ লোপাটের ঘটনায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এ কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আজমালুল বলেন,`মামলা করা লাগবে না, ওরা (রিজার্ভ ব্যাংক) লজ্জায় এমনি টাকা দিয়ে দিবে। আমার তো মনে হয় এমনি দিয়ে দেওয়া উচিত। মামলা করার প্রয়োজন নেই। তাদের একটা বিরাট রেপুটেশন রিস্ক আছে।’ সবাই (বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক) যদি মনে করে নিরাপদ না তাহলে তাদের টাকা নিয়ে যাবে। আর তাই তারা ব্যবসা করতে পারবে না।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তার চেম্বারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মামলাতো করাই যায়। আমিতো চুরির একটা ভিকটিম। যে টাকা দিয়েছে সেটা তো আমার ইনস্ট্রাকশন অনুসারে দেওয়ার কথা। সেটা তো আমি (বাংলাদেশ ব্যাংক) দিইনি। এটা ক্লিয়ার। ইনস্ট্রাকশন চোর দিয়েছে। চোরের ইনস্ট্রাকশন অনুসারে কাজ করলে আমরা তো বলতেই পারি তুমি আমার ইনস্ট্রাকশন অনুসারে কাজ করোনি। আমার টাকা ফেরত দাও। এটা সহজ।

আইনজীবী হিসেবে তাদের কাজের সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমাকে যে কাজটা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যে টাকাটা উদ্ধার করার জন্য। যে টাকা চুরি হয়েছে সেটাকে রিকভার করা। এটার জন্য কাউকে জেল দেওয়া বা জরিমানা করা এটা আমার কাজ নয়। এটা নিয়ে এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আমাদের শুধু উদ্দেশ্য টাকাটা উদ্ধার করা।

কিভাবে টাকা উদ্ধার করা যায় এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা উদ্ধার করার জন্য আমরা যেটা দেখছি সেটা হলো ফেড়ারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি আছে। যেটা আমেরিকার নিউ ইয়র্কে আছে সেটা সেন্ট্রাল ব্যাংকদের ব্যাংক। সেখানে ২৫০টা সেন্ট্রাল ব্যাংকের শাখা আছে। সেখানে আমাদের টাকা রাখার উদ্দেশ্যে হলো টাকাটা সিকিউর থাকে। ওটা একটা সিকিউর জায়গা। সিকিউর হলেও দেখা যাচ্ছে আমাদের টাকা সেখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে।। অন্য জায়গায় গেছে। আমরা পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন দেইনি। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন দেয়নি। তা সত্বেও চলে গেছে।’

আজমালুল হোসেন বলেন, ‘উনারা কি বুঝতে পারেনি ফেইকভাবে টাকা চলে গেছে। সে জন্য ওনারা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন কি না সেটা আমি দেখছি। আরেকটা জিনিস দেখছি যে সিস্টেমের মধ্যে কোনো ত্রুটি আছে কি না। সিস্টেম ডেফিসিয়েন্সি আছে কি না। তো দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু সিস্টেমে ডেফিসিয়েন্সি আছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যে ইনস্ট্রাকশনগুলোর ওপর অ্যাক্ট (কাজ ) করেছে সেগুলোর কয়েকটা মনে করেছে যে জেনুইন না। সেখানে কনফারমেশন চেয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। কনফারমেশন পাওয়ার আগে তারা পেমেন্ট করলো।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটা জিনিস আছে বেআইনি ভাবে যদি কোনো টাকা চলে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে সেখানে একটা সিস্টেম আছে যে টাকাটা রিকল (ফেরত চাওয়া) করতে পারে।’

‘একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে ইনস্ট্রাকশন যেটা এসছিলো পে করার জন্য সেটা চার তারিখে। আর টাকা পেমেন্ট হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি। সেখানে আমাদের উইকেন্ড শুরু হয়েছে শুক্রবার ও শনিবার। আমেরিকাতে শনিবার ও রোববার ছুটি ছিলো। ফিলিপিন্সে সোমবারে ছুটি ছিলো। সোমবার পর্যন্ত টাকাটা পেমেন্ট হয়নি। হয়েছে মঙ্গলবার।’

‘৪ তারিখ আর ৯ তারিখের মধ্যে পাঁচ ছয়দিনের তফাৎ। পাঁচ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমটা অচল হয়ে গিয়েছিলো । বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কমপ্লেইন করেছে এ টাকাগুলোর জন্য আমরা ইনস্ট্রাকশন দিইনি। ইমেইল করেছে চিঠি দিয়েছে। সুইফট ম্যাসেজ দিয়েছে। সেগুলোর কোনো উত্তর আসেনি।’

‘২৪ তারিখে বাংলাদেশ সব তথ্য নিয়ে একটি চিঠি দেয়। সে চিঠির এখনো উত্তর আসেনি। ওখানে এন্টি মানিলন্ডারিং ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে। এফবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু এটার উত্তর এখন পর্যন্ত আসেনি। আমার কাজের মধ্যে যেটা আসেতেছে আমরা চিঠির উত্তর নিবো। কবে আপনারা (রিজার্ভ ব্যাংক) পেমেন্টগুলো করলেন, আপনাদের কাছে কবে ইনস্ট্রাকশন এসেছে। আপনি কবে দিয়েছেন।’

‘আরেকটা জিনিস আমি যেটা দেখছি সেটা হলো ইন্টারমিডিয়েট ব্যাংক যারা আছে। এটাতো সরাসরি ফিলিপেন্সে যায়নি। টাকাতো গেছে ইন্টারমিডিয়েট ব্যাংকের মাধ্যমে। চারটা ব্যাংকের মাধ্যমে। তাদের কোনো ল্যাপস আছে কি না। অনেক জায়গাতে আমরা চিঠি লিখছি। তথ্য পেয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করবে কি করবে না।’



মন্তব্য চালু নেই