লতিফ ইস্যুতে চট্টগ্রাম আ.লীগের দুই পক্ষে উত্তেজনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির ঘটনায় সরকারদলীয় সাংসদ এম এ লতিফকে ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে বিবদমান দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে। ‘লতিফ হটাও আন্দোলন’ ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংসদ এম এ লতিফের দেহাবয়বের ওপর বঙ্গবন্ধুর মাথা সংযোজন করে কয়েক শ ব্যানার ও বহু পোস্টার লাগানো হয়। এম এ লতিফের সংসদীয় এলাকায় লাগানো এসব ব্যানার-পোস্টার নিয়ে ফেসবুক, খেলার মাঠ, হোটেল-রেঁস্তোরায় আড্ডাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছবি বিকৃতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে দুটি মানহানির মামলাও হয়েছে।

এ ছাড়া ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন এম এ লতিফের সাংসদ পদ বাতিলসহ শাস্তির দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছে। তারা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।

তাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু হলেন সংবিধানের অংশ। তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছেন এম এ লতিফ, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এম এ লতিফের অন্তরে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা লুকিয়ে আছে বলে তিনি এমনটি করতে পেরেছেন। এ জন্য তার ফাঁসি হওয়া উচিত।

মামলা আর জনরোষ বুঝতে পেরে পরপর দুটি সংবাদ সম্মেলন করেন লতিফ। প্রথমে এটাকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিলেও গত রোববার দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনে এম লতিফ ছবি বিকৃতিকে ‘ডিজাইনারের প্রিন্টিং মিসটেক’ বলে বর্ণনা করেন। এ সময় ঘটনার দায় স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি।

কিন্তু লতিফের এ কথায় চিড়ে ভিজছে না জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা খোরশেদ আলম বলেন, এমপি লতিফ জেনে-শুনে এ কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

খোরশেদ আলম বলেন, লতিফের শাস্তির দাবিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানে নাগরিক মঞ্চ চট্টগ্রাম সমাবেশ করবে। সমাবেশে ১৪ দলের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন জোটের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী।

এদিকে এম এ লতিফের পক্ষে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের অন্য পক্ষটি। মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শেখ মাহমুদ ইসহাকের স্বাক্ষরে পাঠানো এক চিঠিতে কয়েকজন কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা লতিফের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিবৃতিদাতারা এই ঘটনাকে লতিফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। পরোক্ষভাবে তারা এটি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ষড়যন্ত্র বলে প্রচারের চেষ্টা করেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন এখনো কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, “সাংসদ এম এ লতিফ যা-ই বলুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে তিনি গর্হিত কাজ করেছেন। এ কাজ তিনি জেনে-শুনেই করেছেন। এ দায় থেকে তিনি নিজেকে কোনোভাবেই মুক্ত করতে পারবেন না।”

এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীরা জানান, সাংসদ এম এ লতিফ এমনিতেই বিতর্কিত। বন্দর নিয়ে গত কয়েক বছরে তিনি অনেক বিতর্কিত কাজ করেছেন। তবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে বিদ্যমান দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির ঘটনায় লতিফকে নিয়ে।

বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির ঘটনায় নগর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. অনুপম সেন জানান, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তার সম্মান যাতে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সর্বতোভাবে জাগ্রত থাকতে হবে।”



মন্তব্য চালু নেই