লাগামহীন রসুন, বাড়ছে পিঁয়াজের দাম

কয়েকদফা বাড়ার পর রসুনের দাম কিছুদিন স্থির ছিল। কিন্তু গত দু’একদিন ধরে আবারও রসুনের দাম বেড়েছে। শুধু রসুনের দামই নয় বাজারে পিঁয়াজের দামও ঊর্ধ্বমুখি। সেই সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। ব্যবসায়িরা রোজার আগেই পিঁয়াজ ও রসুনের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন। নিত্যপণ্যে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন বলে মনে করছেন ভোক্তারা।

শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। আমদানি করা রসুনের পাশাপাশি দেশীয় রসুনের দামও সমান তালেই বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, তা শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি রসুনে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসেব মতে, গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। সংস্থার হিসেবে গত এক মাস আগে দেশি রসুন ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১৭৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার দেশি রসুন ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পিঁয়াজ (দেশি) ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় এবং আমদানি করা পিঁয়াজ ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পিঁয়াজ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি দেশি পিঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। অন্যদিকে পাইকারী বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে আমদানি করা পিঁয়াজের দামের পার্থক্য বেশ ব্যবধান দেখা গেছে।

পাইকারী পিঁয়াজের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকেজি আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকায় (খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়) এবং দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকায়।

পাইকারী ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, দেশি পিঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ছে। তবে রোজার আগে পিঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

শ্যামবাজার বরিশাল বাণিজ্যালয়ের স্বত্বধিকারী হাজী সামুদ্দিন হাওলাদার বলেন, চাহিদা যখন বাড়ে তখন পণ্যের দাম বাড়ে। রোজায় পিঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাবে তাই রোজার আগেই দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে।

এদিকে, বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়ে অপরিবর্তিত আছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৩৮০ টাকা থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের রোজার আগে ব্যবসায়িরা বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতো। এখন তা না করে মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হওয়ার আগেই তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

তাতে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠককালে ব্যবসায়িরা বলেন, ‘পণ্যের দাম রমজানের আগে বাড়েনি। এগুলোর দাম অনেক আগেই বেড়েছে। তাই সরকারের উচিত পণ্যের দাম কেন বাড়ছে তার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা ও তা নিয়ন্ত্রণ করা।

ভোক্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আসলে নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা খুব দুর্বল। আর এ কারণে নিয়ন্ত্রহীন নিত্যপণ্যের বাজার। যার ফলে ভোক্তাদের মাসুল দিতে হচ্ছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা থেকে ৩৪ টাকায়। শুক্রবার পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির ১০০ ডিম ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকায় (একশ)।

এদিকে, বাজারে কাঁচাপণ্যের দাম ওঠানামার মধ্যে আছে। রাজধানীর স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি বেগুন ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, সাদা গোলাকার বেগুন ৩০ টাকায়, গাজর ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, শশা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, ঝিঙা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, চিচিঙ্গা ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, পেঁপে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা (গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা), দোন্দল ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, শালগম ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, বটবটি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, কচুর ছড়ি ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, লতি ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, টমেটো ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, করলা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায়, ঢেঁড়স ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, ওস্তা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, পটল ২৫ টাকা ৩০ টাকায়, শাজনা ৬০ টাকায় এবং কাকরোল ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে প্রতিটি বড় লাউ ৩৫ টাকায় এবং ছোট লাউ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ছোট কুমড়া ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং বড় কুমড়া ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত আছে। বাজারে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায়। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৪৫৫ টাকায়। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়।



মন্তব্য চালু নেই