‘লাশটা জঙ্গলে পড়ে ছিল, মাথাটা ছিল থেঁতলানো’

‘তনু বাসায় ফেরেনি শুনে টর্চলাইট নিয়ে মেয়ের খোঁজে বের হই। তখন রাত সোয়া ১০টার বেশি। বাসার কাছেই একটি কালভার্ট আছে। কালভার্টের পাশে দেখি তনুর একটি জুতা পড়ে আছে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। তারপর আমার ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন রুবেলও বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। কিছু দূরে ওর মোবাইল ফোনটা পড়ে থাকতে দেখি। একটু উঁচু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে তনুকে পেলাম। মাথার নিচটা থেঁতলে আছে। ওর মুখে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ।’ সোহাগী জাহান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন তার মেয়ের লাশ খুঁজে পাওয়ার কথা জানাতে গিয়ে হাহাকার করে ওঠেন এভাবেই।

গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে।পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংকের পাশে তনুর মৃতদেহ খুঁজে পান তার বাবা। পরে লাশ কুমিল্লা সিএমএইচে নিয়ে যান তারা।

তনুর বাবা-মায়ের আহাজারিতনুর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন তিনি রাত সোয়া ১০টার দিকে বাসায় ফিরে শোনেন মেয়ে তখনও ফিরে আসেনি। খুঁজতে গিয়ে শুধু সন্তানের লাশটাই ফিরে পান তিনি।

ইয়ার হোসেন বলেন, ‘তনু দুটি টিউশনি করতো। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হতো। ওর মা আনোয়ারা বেগম এগিয়ে দিত। রাতে ফেরার পথেও ওর মা এগিয়ে নিয়ে আসতো। যেখানে টিউশনি করতো তার দূরত্ব বাসা থেকে ২০০ গজ। হত্যাকাণ্ডের স্থল বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে। আমি এখানে ৩১ বছর চাকরি করি। আট বছর ধরে কোয়ার্টারে থাকি। সেনানিবাসের সুরক্ষিত এলাকায় কারা ওকে মেরেছে জানি না। আল্লাহ দেখেছেন। আমি তনুর হত্যাকারীদের কঠিন বিচার চাই।’

তনুর মায়ের হাহাকারতনুর বড় ভাই নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমরা ভাই বোনেরা বন্ধুর মতো ছিলাম। তার নেতৃত্ব দেওয়ার একটা হবি ছিল। স্কুল কলেজে সে ক্লাসে ক্যাপ্টেন হতো। তার ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার। বাবা একদিন তাকে বলেছিলেন- মা তোমাকে বিয়ে দিতে চাই। তোমার কোনও পছন্দ আছে কিনা। সে বলেছিল তার পছন্দ নেই। তবে অনার্স শেষ করার পর সে বিয়ে করবে।’

তনুদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। এখন পুরো পরিবার সেখানে অবস্থান করছে। বাড়িতে ভিড় করছেন পাশের গ্রামের মানুষ।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবদুর রব বলেন, ‘২১ মার্চ তনুর বাবা কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ২১ মার্চ আমরা সিএমএইচ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করি। তনুর লাশে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।’

তনুর লাশ উদ্ধারের স্থান পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসককুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, ‘আমরা সেনানিবাসের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেছি। আশা করছি শিগগিরই খুনিরা শনাক্ত হবে। তনুর পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তনুর পরিবারকে জমিসহ একটি ঘর করে দেওয়া হবে।’

এদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম জীবন জানিয়েছেন, তনুর হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই