লাশ দুটি নিতে আসছেন না কেউ

ঘটনা ১৩ জানুয়ারি। হাজারীবাগে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন আব্দুল্লাহ নোমান (৩৫) ও কামাল ওরফে হিরন (৩০)। ওই দিন রাতেই দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে পুলিশ। তাদের নাম পাওয়া গেলেও ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে লাশ যেমন দেওয়া যাচ্ছে না, তেমনি কেউ নিতেও আসছেন না। বিপাকে পড়েছেন মর্গসংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ বলছে, জঙ্গিদের লাশ হওয়ায় নিকট স্বজনেরা নিতে আসছেন না। বুধবারও মর্গের মরচুয়ারিতে (ফ্রিজ) লাশ দুটি দেখা যায়।

মর্গের তত্ত্বাবধায়ক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘লাশ দুটি নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো লাশ এখানে আসছে। এগুলোর জন্য ওই লাশগুলো রাখা যাচ্ছে না। মরচুয়ারিতে ৪ থেকে ৬টি লাশ রাখা যায়। আর লাশ রাখতে না পেরে অনেক সময় পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে লাশের। আবার আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমেও দাফন করা যাচ্ছে না। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সঠিকভাবে কিছু বলছে না।’

ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা আছে। এ কারণে মর্গের কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলেই দাফন করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে পুলিশের লিখিত অনুমতি লাগে। আবার ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না।

বুধবার সন্ধ্যায় ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কাজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তদন্তে হিরণের দেহে ৫টি এবং নোমানের ৬টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। এখন এটি নিয়ে যাবে স্বজনেরা। তারা না এলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এখন কেন তারা এ দুটি লাশ নিয়ে টালবাহানা করছে, তা বোধগম্য নয়।’ তবে লাশ দুটির দ্রুত দাফনের পক্ষে তিনি মত দেন।

হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আলিমুজ্জামান জানান, পুলিশ এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে। তারাই মামলা করেছে। মামলার তদন্তও তাদের ওপর। এ কারণে লাশ দুটি কী করা হবে, সে ব্যাপারে তাদেরই করণীয় আছে। তবে আমাদের বলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’

ওই ঘটনার অভিযানে নেতৃত্ব দেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সানোয়ার হোসেন।

আলাপে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন লাশগুলো তাদের স্বজনেরা নিয়ে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিহত দুজন জঙ্গি দলের সক্রিয় সদস্য। এ কারণে তাদের পরিবার-পরিজন লাশ নিতে আসছেন না। আবার তারা জীবিত থাকাবস্থায়ও ঠিকানা ঠিকমতো বলেননি। একসময় কুড়িগ্রাম কিংবা রংপুরের কথা বললেও বিস্তারিত বলেননি। এ কারণে তাদের সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া, ওই দুজন একজন আরেকজনকে চেনেন না। কেউ কারো ব্যাপারে বিস্তারিতও বলতে পারেননি। লাশ এত দিন কেনই বা থাকবে, এটি তো আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা যায়।’ এ ক্ষেত্রে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না বলে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেন।

ঘটনার দিন রাতে পুলিশ দাবি করে, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদে হাজারীবাগ থানার শিকদার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা গুলি করতে থাকে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এতে দুই জঙ্গি মারা যায়। এর মধ্যে হিরণ গাবতলীতে পুলিশ চেকপোস্টে হামলা করে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে খুন করে। হিরণ পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে বোমা হামলার অন্যতম আসামি ছিল।



মন্তব্য চালু নেই