লিটন হত্যা: কাদের খানের সহযোগী চন্দন সরকারের খোঁজে পুলিশ

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি কাদের খান সোর্স হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছিলেন উপজেলা আ. লীগের সাবেক সহদফতর সম্পাদক কট্টর এমপি লিটনবিরোধী গ্রুপের অন্যতম চন্দন কুমার সরকারকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন কাদের খান।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলাম জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সংবাদদাতা এবং কাদের খানের অন্যতম সোর্স হিসেবে চন্দন কুমার সরকারের সম্পৃক্ততার কথা শুধু কাদের খানই নন চারজন কিলারই এ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে।

এদিকে, চন্দন সরকার এখন ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। গাইবান্ধার কয়েকজন ব্যক্তিকে কলকাতার একটি নম্বর থেকে মোবাইলফোনে তিনি যোগাযোগ করে বলেন এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাকে অহেতুক ফাঁসানো হচ্ছে।

তবে কাদের খান এবং কিলারদের সঙ্গে তার মোবাইলের কথোপকথন রেকর্ড করা আছে বলে জানানো হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। এই খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলে কেন পালিয়ে গা ঢাকা দিলেন এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, পুলিশ তার খোঁজ করছিল বলেই ঝামেলা এড়াতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

জিরো থেকে হিরো : সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের সুশীল চন্দ্র সরকারের ছেলে চন্দন সরকার হঠাৎ করে উপজেলা আ. লীগের সহদফতর সম্পাদকের পদ পেয়েই জিরো থেকে হিরো হয়ে ওঠেন। অথচ তার দরিদ্র পিতা কাঠুরে হিসেবে এখনো জীবিকা নির্বাহ করছেন।

চন্দন ওই এলাকার কয়েকজন নামধারী সাংবাদিক এবং সন্ত্রাসীদের নিয়ে একটি চাঁদাবাজ গ্রুপ তৈরি করেন। তার নেতৃত্বে এই গ্রুপটির কাজই হলো মূলত নানা অভিযোগ করে টাকা নিয়ে তা মীমাংসা করা। কাদের খান যখন এমপি ছিলেন তখন এমপির বিশেষ বরাদ্দের কয়েকটি প্রকল্পের বিরুদ্ধে তিনি এবং তার অনুসারীদের স্বাক্ষরে বিভিন্ন দফতরে কয়েকটি অভিযোগ দাখিল করেন। এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হলে কাদের খানের লোকজন তার নির্দেশে চন্দনকে ম্যানেজ করে নেয়। এভাবেই কাদের খানের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে।

পরবর্তীতে এমপি লিটন তার এই সমস্ত চাঁদাবাজি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এবং তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এই ক্ষোভে চন্দন সরকার সে সময়কার লিটনবিরোধী আ. লীগের অন্য গ্রুপটির সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং এমপি লিটনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে নানা অভিযোগ করতে শুরু করেন।

পরবর্তীতে লিটনকে একেবারেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে কাদের খানের সঙ্গে সোর্স হিসেবে সম্পৃক্ত হন। চন্দন সরকার এসএসসি পাস করলেও তিনবার পরীক্ষা দিয়েও এইচএসসি পাস করতে পারেননি। ফলে তার লেখাপড়ার ইতি ঘটে এবং উচ্চাকাক্সক্ষার বশবর্তি হয়ে নানাভাবে চাঁদাবাজি শুরু করেন।



মন্তব্য চালু নেই