লুই কানের নকশা আনতে আমেরিকায় ৫ কর্মকর্তা

কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হচ্ছে জাতীয় সংসদের মূল নকশা। এ উদ্দেশে সোমবার আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় গেছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন ৫ কর্মকর্তা। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া। তার সঙ্গে রয়েছেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯) অধিশাখা মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি সাইকা বিনতে আলম। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে নকশাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে নকশা আনতে খরচ ধরা হয়েছিল ৩ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত পেনসিলভেনিয়ার কর্র্তৃপক্ষ পুরনো নকশার জন্য দাবি করেছে এক কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গোলাম কিবরিয়া বলেন, সবকিছু চূড়ান্ত। আগামী ২৪ অথবা ২৫ তারিখের মধ্যে আমরা নকশা নিয়ে দেশে ফিরবো। কিছু নকশা যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য সবমিলিয়ে ১৫ দিন সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে নকশার টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সংসদ ভবন ঘিরে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৮০০০ নকশা। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৮৫৩টি নকশা। স্থাপত্য অধিদপ্তরের পরামর্শে এসব নকশা চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে প্রতিটি নকশার যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশকে গুনতে হয়েছে ৩৫০০ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সচিবালয়ের নিজস্ব ফান্ডে এ পরিমাণ টাকা না থাকায় বিশেষ বরাদ্দ নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বরাদ্দ পেয়েছে সংসদ সচিবালয়। সংসদ ভবনের এ নকশাটি তৈরি করেন লুই ইসাডোর কান। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তার ছেলে নকশা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।

এ প্রসঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের সাবেক সচিব আশরাফুল মকবুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে নকশাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। তারা জানিয়েছে, মূল নকশাসহ সংসদ ভবন ঘিরে রয়েছে ৮ হাজার নকশা। এর মধ্যে আমাদের যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো নিতে পারবো। তিনি বলেন, এসব নকশা সংগ্রহের আগে যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। প্রসঙ্গত নকশা আনার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সংসদ সচিবালয়ের সাবেক ওই সচিব। ২০১৪ সালের ১লা জুন সংসদ কমিশনের বৈঠকে প্রথমবারের মতো নকশা সংগ্রহে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও এ নিয়ে উদ্যোগ নেন। তিনি নির্দেশ দেন সংসদ সচিব আশরাফুল মকবুলকে।

এরপরই সচিব বৈঠক করেন স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ও গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে। ঘোষণা দেন- নকশা দেশে আনতে লুই ইসাডোর কানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে একটি টিম যাবে বিদেশে। একই বছরের ২৭শে মে আবারও বৈঠক হয় সংসদ কমিশনের। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আগের কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি জানতে চান। এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী নকশা সংগ্রহের বিষয়টি জানতে চান। তবে কোনো জবাব দিতে পারেনি সংসদ সচিবালয়। পরে প্রধানমন্ত্রী আবারও নির্দেশ দেন নকশা সংগ্রহের। এ সময় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, টাকার অভাবে নকশা আনা সম্ভব হচ্ছে না। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, যত টাকা লাগে তা দেয়া হবে। তারপরও মূল নকশা দেশে আনতে হবে। মূলত এরপরই নড়েচড়ে বসে সংসদ সচিবালয়।

এ নিয়ে একটি ফাইল তৈরি করে পাঠানো হয় স্পিকারের কাছে। সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে সচিব, স্থাপত্য বিভাগের কয়েক বিশেষজ্ঞ ও গণপূর্তের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা একটি টিম বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, এর আগে লুই কানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা প্রায় ৮৫ হাজার ডলার বকেয়া রয়েছে বলে দাবি করেন। বর্তমানে তা প্রায় ৪ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। টাকার এ লেনদেন নিয়ে তাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় বাংলাদেশ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নকশার জন্য চুক্তি করা টাকা পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ। এতে বঞ্চিত করা হয়েছে লুই কানকে। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, লুই কান পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করেননি। তিনি ৮০ ভাগ নকশা চূড়ান্ত করেন। যে পরিমাণ জমির ওপর নকশা তৈরির কথা তা শেষ করতে পারেননি লুই কান।

এজন্য পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এসব বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত কোটি টাকায় রাজি হয় প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘদিন পর ১৯৮২ সালের ২৮শে জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।-এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই