লুণ্ঠনের বাজেট : ফখরুল

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ‘জনকল্যাণ হবে না’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অবৈধ শাসনকে পাকাপোক্ত করার জন্য যা কিছু লুণ্ঠন করা দরকার, এই বাজেটে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে এমবিএ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব) আয়োজিত এক বাজেট পর্যালোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে, বিষয়টি জনগণের মধ্যে প্রচারের জন্য বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে দাবি করেন ফখরুল।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। এতে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে আগামী অর্থবছরে জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট উপাস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় এই বাজেটের আকার বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন একটি সরকার এই বাজেট দিচ্ছে যারা জনগণের ম্যান্ডেড ছাড়া ক্ষমতায় আছে। প্রহসন করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। সেজন্য এই বাজেটের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই, তাদের কল্যাণও হবে না। এদের অনৈতিক-অবৈধ শাসনকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য যতকিছু লুণ্ঠন করা দরকার, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কয়েকগুণ বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘কর আরোপ করা হয়েছে সাধারণ জনগণের ওপর। এই যে বর্ধিত বাজেট, এতে অর্থের যোগান দেওয়ার জন্য যে কর আদায় করা হবে সেখানে বলা হচ্ছে, প্রতি ব্যক্তির মাথাপিছু কর দিতে হবে ১৫ হাজার ১১২ টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের কর দিতে হয়েছে ১১ হাজার ২৭ টাকা। অর্থাৎ ৪ হাজার ৮৫ টাকা বেড়েছে। এই অর্থ পুরোপুরি সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে।’

অর্থমন্ত্রী বাজেটপূর্ব সময়ে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে বাজেট নিয়ে আলোচনা করলেও তাদের কোনো পরামর্শ গ্রহণ করেননি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক বাজেট বাড়িয়ে দেখাতে হবে। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে প্রচার করতে হবে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুণভাবে উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে।’

ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা জানে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না, রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পাবে না। সেজন্য তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবে না। তারা বিভিন্ন কৌশলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়।’

দেশে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে দাবি করে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

‘আজকে বাংলাদেশে যে অবস্থা তা শুধু অর্থনৈতিক নৈরাজ্য নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাজ্য শুরু হয়েছে; যা বাংলাদেশকে দ্রুত রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সকলের ঐক্য দরকার। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু বাজেট আলোচনা নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করে তাদের সঙ্গে নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে’, বলেন তিনি।

বাজেট পর্যালোচনা সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটকে ‘আমলাতান্ত্রিক বাজেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, ‘এটা কোনো বাজেটই নয়। এতে করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। এনবিআরের করারোপের প্রক্রিয়ায় সাধারণ আয়করদের দ্বিগুণ কর দিতে হবে। এটি সরকারের ব্যয় নির্বাহের বাজেট। সরকারের কোনো ব্যয়ই জনকল্যাণমূলক নয়।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাকিল ওয়াহেদের সঞ্চলনায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ, খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, সৈয়দ নাসের বখতিয়ার আহমেদ প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই