শক্তিশালী অবস্থানে সরকার, পতনের আশা ছেড়েছে বিএনপি

বিরোধী দলের বর্জনের মুখে ১৯৯৬ সালে একতরফা নির্বাচন নির্বাচন করে দুই সপ্তাহও টিকতে পারেনি বিএনপি। তখন আওয়ামী লীগের দাবি মেনে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে ক্ষমতা ছাড়ে বিএনপি। প্রায় দুই দশক পর উল্টো চিত্র। এবার বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মুখে নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির আশা ছিল ৯৬ এর পুনরাবৃত্তির। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের দুই বছর হয়ে গেছে। আপাতত সরকার পতনের আশা বাদ দিয়েছে বিরোধী দল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু দুই বছরে সরকার এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। কৌশলে ভুল আর প্রস্তুতি ছাড়া আন্দোলনের পরিকল্পনায় বিএনপি ডুবেছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘দুই বছরে সরকার অনেক শক্তিশালী ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থায় আছে। এর অন্যতম কারণ শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব। এটা গণতন্ত্রের জন্য কতটা ভালো সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় সরকার দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষের এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন’।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে লাগাতার আন্দোলনে নামে বিএনপি। কিন্তু যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় বিএনপি। এরপর নানা ঘটনায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই নাজুক হয়ে যায়। দলের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নেও একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে দল। এমনকি প্রস্তুতি ছাড়া আন্দোলন নয়-এমন ঘোষণাও এসেছে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, আপাত দৃষ্টিতে সরকারকে মজবুত অবস্থানে দেখা যাচ্ছে। সরকার দল বলছে, তারা দেশে উন্নয়নের আবহ তৈরি করেছে। কিন্তু বেসরকারি খাত এখনও সেভাবে শক্তিশালী অবস্থানে নেই। ব্যংকে টাকা থাকলেও উদ্যোক্তার অভাবে এই টাকা বিনিয়োগে আসছে না। এর অন্যতম কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং তার মীমাংসা হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে শেলী বলেন, বাংলাদেশে যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকে তারা বিরোধী দলকে মোকাবেলা করতে প্রশাসনের উপর নির্ভর করে। এবারও সে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের একটি মতাদর্শ আছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই সাংগঠনিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি। তারা এখন দিবসভিত্তিক কিছু কর্মসূচি পালন করছে। নানা কারণে দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসনে দলকে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে বিরোধী দলকে মোকাবেলায় তারা প্রশাসনের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, সাংগঠনিক দক্ষতায় ও জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগ এখন তুঙ্গে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গণবিরোধী তৎপরতার ফল ভোগ করছে বিএনপি। গত পৌর নির্বাচনেও এর প্রমাণ মিলেছে।

২০১৯ সালে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না- জোর দিয়ে বলছেন সরকার দলের নেতারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে না এলেও জনগণ আওয়ামী লীগকে পাঁচ বছরের জন্য ভোট দিয়েছে। ভোটের আগে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কথা রাখতে হবে। আগেভাবে নির্বাচন দেয়ার সুযোগ নেই।

বিএনপিও মনে করছে, আপাতত সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর পরিস্থিতি নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা মনে করি, দেশের জনগণের দাবি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সে দাবি আদায়ে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চলবে’।

বর্তমান বাস্তবতায় আন্দোলনে সফল হওয়ার সম্ভবনা দেখছেন কি না- জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে আমরা কতটুকু পারি। কিন্তু এটা বলতে পারি, বর্তমানে গণতন্ত্র সুসংহত অবস্থানে নেই। গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এখানে হারজিতের কোন কিছু নেই’।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই