শাহজালালে নিরাপত্তা: দুই কোম্পানিকে নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা উন্নয়নে দুই ব্রিটিশ কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। তালিকায় থাকা যুক্তরাজ্যের রেডলাইন সিকিউরিটি কোম্পানি (আরএসসি) ও ওয়েস্টমিনস্টার গ্রুপ (ডব্লিউএমজি) এর মধ্য থেকে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। সিদ্ধান্তে না পৌঁছাতে পারায় চুক্তির তারিখ একদিন পিছিয়ে সোমবার ধার্য করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, আরএসসি ও ডব্লিউএমজির প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে এবং তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা শেষে আরএসসিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। আরএসসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, তারা প্রথমে ছয় মাসের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবে। পরে ১২ মাসের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরএসসি একটি প্রশিক্ষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত অফিস ও বাসায় নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান করে। অন্যদিকে ডব্লিউএমজির প্রশিক্ষণ সক্ষমতাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সব ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়া হিথরোসহ বিশ্বব্যাপী ৮০টি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা সহযোগিতার অভিজ্ঞতা রয়েছে ডব্লিউএমজির। নিরাপত্তা উন্নয়নে দুই বছরের জন্য ডব্লিউএমজি চেয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আরএসসি চেয়েছে ৭৫ কোটি টাকা।

এদিকে, শাহজালালের নিরাপত্তা উন্নয়নে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে গতকাল বেবিচকের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে একটিকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করার পরিকল্পনা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

বৈঠক শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, সোমবার ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এর দু-একদিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা হয়েছে। সেখানে তারা বলেছেন, কাজগুলো শেষ হওয়ার পর রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে কার্গো চলাচলের অনুমতির বিষয়টি সুরাহা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাস্কফোর্সের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে তিনটি কোম্পানিকে বাছাই করা হয়েছে। ওই দুটি কোম্পানি ছাড়াও অপরটি হল ‘রেসট্রাটা সিকিউরিটিজ’।

ওই কর্মকর্তা আরো সদস্য বলেন, রেডলাইন সিকিউরিটির সঙ্গে ওয়েস্ট মিনিস্টার কোম্পানির দরদামেও অনেক পার্থক্য আছে। দুই বছরের জন্য রেডলাইন সিকিউরিটি দর দিয়েছে ৭৪ কোটি টাকা। তবে ওয়েস্ট মিনিস্টার গ্রুপ এক্ষেত্রে ৬ মাস পর মেশিনারিজের জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেবে না বলে দর প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে। শুধু জনবল দিয়ে সহযোগিতা করবে। ৬ মাসের জন্য রেডলাইনের দর ৫৮ কোটি টাকা। অপরদিকে ওয়েস্ট মিনিস্টার গ্রুপের দর ২০ কোটি টাকা।

দুটি কোম্পানির কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেডলাইন কোম্পানি বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছে। তারা মূলত প্রশিক্ষণ বেজড কোম্পানি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দেয়ার মতো রেডলাইনের নিজস্ব মেশিনারিজ ও টেকনোলজি নেই। তবে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো দক্ষ জনবল আছে।

অপরদিকে, ওয়েস্ট মিনিস্টার গ্রুপ কোম্পানির যুক্তরাজ্যের হিথ্রো, করাচি, ইরাকসহ বিশ্বের ৫০টির বেশি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত তাদের নিজস্ব জনবল, মেশিনারিজ ও টেকনোলজি আছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো জনবলও তাদের আছে।

এদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, নানা কারণে শেষ পর্যন্ত রেডলাইন সিকিউরিটি কোম্পানিকে শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বেবিচকের সঙ্গে রেডলাইনের ট্রেনিং সংক্রান্ত একটি চুক্তি আছে। এই চুক্তির আওতায় রেডলাইনের ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ৩৪ জন স্ক্যানিং মেশিন অপারেটরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫ জনের ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১৫ জনের ট্রেনিংও দু-একদিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই