শিক্ষার্থীদের ‘ভুল ও মানহীন বই’ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়!

শিক্ষার্থীদের জন্য ভুলে ভরা ও নিম্নমানের বই প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আর এসব বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বছরের শুরুতে। ভুলে ভরা এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র ১৬তম বৈঠকে এই অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগে বলা হয়, প্রায় প্রতি বছরই পাঠ্যবইয়ে ভুল ধরা পড়ছে, এটি কখনো কাম্য হতে পারে না। এসব ভুলে ভরা মানহীন বইয়ে শিক্ষার্থীদের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হচ্ছে।

কমিটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক স্তরের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে প্রায় প্রতি বছরই প্রচুর ভুল ধরা পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। তারা বইয়ের মান যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি তুলেন।

সূত্র মতে, বৈঠকে এনসিটিবি’র পুস্তক ছাপানো নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য এনসিটিবি’র দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

গত বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মোহাতার হোসেন বলেন, ‘এনসিটিবি’র বই ছাপানোয় ভুল ও খারাপ কাগজ দিয়েছে। সেটি নিয়েই গোলমাল। টেন্ডারে ৩ ভাগের ১ ভাগ কাজ বিদেশি ঠিকাদাররা পেয়েছিল তারা, ভালো কাগজ দিয়েছিল। তবে দেশি ঠিকাদাররা বইয়ে খারাপ কাগজ দিয়েছে। এতে ৩০ ভাগ কাগজ খারাপ রয়েছে বলে আমরা পেয়েছি। তবে এখনো আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি যাচাই করা হয়নি।’

এদিকে কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কমিটির গত বৈঠকেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সেই সময় মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল ৩০ শতাংশ বইয়ে অনিয়ম পাওয়া গেছে। কিন্তু আজকের বৈঠকে তা ১০-১২ শতাংশ বলে কমিটিকে জানায় মন্ত্রণালয়। তাই সংসদীয় কমিটি ত নিয়ে সন্তষ্ট হতে না পারায় পাঁচ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার কমিটির সভাপতি মোহাতার হোসেন বলেন, ‘আজকে এই একটা ইস্যু ছিল। তাদের জরিমানার ইস্যুটি ছিল। জানুয়ারি মাসে যে বই সাপলাই দেয়া হয়েছিল, তার উপর জরিমানা করা হয়েছে।’ কী পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পেনাল্টির (জরিমানা) টাকা সিলিউরিটির ১০ শতাংশ ও আমরা এনসিটিবিকে যে অনুদান দেয় সেখান থেকে পেনাল্টি করা হবে। ঠিকাদার ছিল ২৪ জন তবে পাঁচজনের কাজে অনিয়ম পাওয়া গেছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।’

এজন্য আর্থিক ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোতাহার হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এই বৈঠকে তা উপস্থাপন করতে পারেনি।’

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে বইয়ের মান যাচাই বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই কমিটির সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নজরুল ইসলাম বাবু, মো. আবুল কালাম, আলী আজম ও উম্মে রাজিয়া কাজল। এ কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কার্যকর সুপারিশ প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।এছাড়া কমিটি এনসিটিবি কর্তৃক ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক মানসম্মত করার সুপারিশ করে।

বৈঠকে কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সামশুল হক চৌধুরী, মো. নজরুল ইসলাম বাবু, মো. আবুল কালাম, আলী আজম এবং উম্মে রাজিয়া কাজল অংশ নেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম দিনেই সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক (মাদ্রাসাসহ) স্তরের চার কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩ কপি বই দেওয়া হয়েছে।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই