শিক্ষার্থী ভিসার নামে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ও ভিসা করিয়ে দেওয়ার নামে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে রাজধানীর উত্তরার ট্রায়াঙ্গল ওভারসিজ স্টাডি সল্যুশনস (টস) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় গত ১ জুলাই প্রতারণার শিকার নয়জনের পক্ষে সাদিকুর রহমান বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এই নয়জন প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছেন।

জিডিতে করা অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ছিল উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের একটি ভবনের পাঁচ তলায়। গত ৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। অফার লেটার এনে দেওয়া, ব্যাংক স্পনসর জোগাড়, ভিসা প্রসেসিং, বিমান টিকিট, সংশ্লিষ্ট দেশে দুই মাস বিনা খরচে আবাসন, অবসর সময়ে চাকরির ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথাও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জিডির বাদীসহ নয়জন প্রতিষ্ঠানটির মালিক তানভীর আহম্মেদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁরা তানভীরকে বিভিন্ন মেয়াদে ৪৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন। এরপর থেকে তানভীর বিভিন্ন কথা বলে তাঁদের ঘুরাতে থাকেন। সর্বশেষ গত ৬ জুন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তানভীরকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ম্যানেজার পদধারী লুৎফুর চৌধুরীর কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি তাঁদের গালিগালাজ করেন। কয়েক দিন পর গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলছে।

ভুক্তভোগী ও থানায় অভিযোগকারী সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমি অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য সাড়ে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু টসের মালিক তানভীর ও কান্ট্রি ম্যানেজার লুৎফর টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন।’

জিডিতে উল্লেখ করা প্রতিষ্ঠানটির তিনটি মুঠোফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। তানভীরের মুঠোফোনও বন্ধ। কয়েক দিন আগে লুৎফরের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। একবার একজন ফোন ধরে জানান, লুৎফর ফোন রেখে বাইরে গেছেন। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর আরেকটি নম্বর খোলা ছিল। তবে তিনি ফোন ধরেননি। অভিযোগের বিষয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু লুৎফর সাড়া দেননি।

ওই ভবনের পাঁচ তলায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। চেষ্টা করেও ভবনের মালিকের মুঠোফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। জিডিতে নাম থাকা প্রতারণার শিকার মোদাচ্ছের চাকলাদার বলেন, তাঁরা ভবনের মালিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভবনের তত্ত্বাবধায়ক তাঁদের জানান যে মালিক সিলেটে আছেন। তাঁরা জানতে পেরেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মাসে ৬০ হাজার টাকায় ভবনের ওই পাঁচ তলা ভাড়া নেন তানভীর। কিন্তু দু-তিন মাসের ভাড়া বাকি রেখেই তিনি পালিয়ে যান।

জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম-ঠিকানা সবকিছুই ভুয়া। তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ কান্ট্রি ম্যানেজার লুৎফরকেও ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই