শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত: বন্ধ হচ্ছে কোচিং

কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করার নির্দিষ্ট বিধানসহ আরো কিছু বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব সংযোজনের মধ্যে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই অনুমোদন নেওয়া, নোট-গাইড প্রকাশের বিরুদ্ধে আইনি কঠোরতা আরোপ, শিক্ষকরা অপরাধ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান। প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের আগে আরেকবার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সবার মতামত নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর পরও কারো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকলে তাও যুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য চূড়ান্ত খসড়া আরেকবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে আইনের সমর্থন দরকার, শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে গেলে যে যে ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে তার ভিত্তিতে শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা আইনের প্রস্তাবিত খসড়ায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার নির্দিষ্ট কোনো বিধান ছিল না। এটা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষকদের অপরাধের কোনো শাস্তির বিধানও ছিল না প্রস্তাবে। শিক্ষকদের কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দেওয়ার বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত রিপোর্টে এ দুটি বিষয়ে শাস্তির বিধান সংযুক্ত না হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হলেও বৈঠকে প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই অনুমোদন নেওয়ার বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের শাস্তি হিসেবে চার বছরের কারাদণ্ডের যে প্রস্তাব খসড়ায় ছিল তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকায় এখান থেকে তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রচলিত আইনে তিন থেকে দশ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।

আইনের কোনো ফাঁক দিয়ে যাতে কেউ নোট বই কিংবা গাইড বই প্রকাশ না করতে পারে সে জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে আইনি বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

পাবলিক পরীক্ষা বিষয়ে একটি আলাদা আইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যকর হলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পঞ্চম শ্রেণির বদলে অষ্টম শ্রেণি শেষে গ্রহণ করা হবে। তখন জেএসসি পরীক্ষা আর থাকবে না বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার কথা।



মন্তব্য চালু নেই