শিকড় খুঁজে পেল মরিয়ম

১৯৮৮ সালের মার্চে সাদ্দাম হোসেন হালাবজা প্রদেশে কুর্দিদের ওপর কেমিক্যাল হামলা চালায়। এই হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত ও অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এদেরই একজন মরিয়ম। সম্প্রতি তিনি খুঁজে পেয়েছেন তার নিজ বাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনদের।

ছোট্ট মরিয়ম হামলার সময় তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইরানের সামরিক বাহিনী তাকে উদ্ধার করে তেহরানে নিয়ে যায়।

মরিয়মের দত্তক মা ফাতিমা জানান, একদিন তাদেরকে জানানো হয় ‘যু্দ্ধ ক্ষেত্র থেকে অনেক শিশু এসেছে। তোমরা চাইলে যেকোনো একজনকে দত্তক নিতে পারো।’ তিনি তাদের মধ্য থেকে একজনকে দত্তক নেন এবং তার মৃত মেয়ের নামানুসারে তার নাম রাখেন মরিয়ম।

১৮ বছর বয়সে মরিয়ম জানতে পারে যে, সে তাদের পালিত সন্তান। তার দত্তক বাবা জানায় মরিয়ম একজন কুর্দি। কিন্তু তিনি তার আসল ঠিকানা জানে না। বাবার মৃত্যুর পর মাকে তার আসল পরিবার ও ঠিকানা খোঁজার কথা জানায় মরিয়ম।

এরপর মরিয়ম ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে পরিজনদের খুঁজতে থাকেন। এ সময়ই তেহরান বিমানবন্দরে দুইজন কুর্দি সমাজকর্মীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা হালাবজা কেমিক্যাল হামলা সংক্রান্ত একটি সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত। যারা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করে।

মরিয়ম বলেন, আমি জানতাম হালাবজায় কেমিক্যাল হামলার সময়ে আমার জন্ম। আমি চিন্তা করলাম আমি হয়তো হালাবজা আক্রমণে নিহত কিংবা বিচ্ছিন্ন কোনো পরিবারের সন্তান।

এই সোসাইটির প্রধান লুকমান কাদির মরিয়মের কেইসটা হাতে নেন। তিনি বলেন, আমরা হালাবজায় কেমিক্যাল হামলা সম্পর্কে জানি। এবং আমরা ইরানে শত শত হারিয়ে যাওয়া শিশু নিয়ে কাজ করছি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এইসব শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে।

তিনি আরো বলেন, এই হামলায় হারিয়ে যাওয়া শিশুদের সংখ্যা অগণিত। মরিয়ম তাদের মধ্যে একজন। আমরা তখন তাকে হালাবজায় ফেরত পাঠাই তার পরিচয় খোঁজার জন্য।

মরিয়ম চলতি বছর মে মাসে হালাবজায় যায়। সেখানে ডাক্তার ফরহাদ বাজার্নজি মরিয়মকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সাহায্য করেন। তিনি মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করেন। এবং তিনি কুর্দি টিভিতে এই হামলায় সন্তান হারিয়ে গেছে সেইসব পরিবারকে ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আহ্বান জানান। মরিয়মের ডিএনএ’র সঙ্গে ম্যাচ করতে ডাক্তার বাজার্নজি ৫৮ টি পরিবারের ডিএনএ টেস্ট করেছেন।

তবে কারো সঙ্গেই মরিয়মের ডিএনএ ম্যাচ করছিল না। শেষ পর্যন্ত গিলাস ইস্কান্দার নামের এক নারীর সঙ্গে মরিয়মের ডিএনএ পুরোপুরি ম্যাচ করে। তিনমাস বিভিন্ন ধরণের টেস্ট করে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেন যে গিলাসই তার মা।

মরিয়মের মা আবার বিয়ে করেছেন। কেমিক্যাল হামলায় তার দুই চোখে যে সমস্যা হয়েছে, তার এখনো চিকিৎসা চলছে। মরিয়মের এক ভাই রয়েছে। সে নেদারল্যান্ড থাকেন। বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্য সে হালাবজায় এসেছে। মরিয়মের এক ছোট ভাই ১৯৮৮ সালের হামলায় হারিয়ে গেছে।



মন্তব্য চালু নেই